মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও মানবিক মূল্যবোধ

স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। পরাধীন জাতি কেশুর চেয়েও অধম।তাই কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,
“স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,কে বাঁচিতে চায়? দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,কে পরিবে পায়?””
-না,কেউই দাসত্বের শৃঙ্খল পায়ে পরতে চায় না।পরাধীনতা স্বীকার করতে চায় না। ব্যক্তি জীবনে নিজের ইচ্ছা মতো বাধাহীনভাবে চলার অধিকারকে আমরা বলি ব্যক্তিস্বাধীনতা।বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তারিখে পরাধীনতার গ্লানি মুছে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে আত্নপ্রকাশ করে।এই স্বাধীনতা অর্জন করতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে এক ভয়াবহ মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে ত্রিশ লাখ জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ।তাইতো কবি শেখ ফজলুল করিম বলেছেন,
“স্বাধীনতা স্পর্শমণি সবাই ভালোবাসে
সুখের আলো জ্বালে বুকে দুঃখের ছায়া নাশে।
স্বাধীনতা সোনার কাঠি,খোদার সুধা দান,
স্পর্শে তাহার নেচে ওঠে শূন্য দেহে প্রাণ।
দর্প ভরে পদানত  উচ্চ করে শির,
শক্তিহীনের স্বাধীনতা আখ্যা দানে বীর।
মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে প্রাথমিকভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর মুক্তি বা স্বাধীনতা লাভের জন্য লড়াই।এই  লড়াই একটি ঔপনিবেশিক শক্তিকে উৎখাত করার জন্য হতে পারে। এই  যুদ্ধ দুটি  বাহিনীর মধ্যকার নিয়ামত বলা সাধারণ  যুদ্ধের ন্যায় না।এর বিস্তৃতি ব্যাপক। মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞার জন্য ইংরেজি ও বাংলা অভিধান ঘাঁটলে আরো স্বল্প পরিসরে মোটামুটি এমন সজ্জাই পাওয়া যায়।এই সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে মুক্তি নামক একটি সাধারণ অনুমিতি আছে।বস্তুত এই মুক্তি ব্যাপারটি পরিষ্কার হলে তার জন্য যুদ্ধের ব্যাপারটিও পরিষ্কার হয়ে।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ  শাসনের যাঁতাকলে প্রায় দু’শ বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল বাঙালি জাতি।১৯৪৭ সালে সেই যাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশে র মানুষ মুক্তিলাভ করলেও মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির।১৯৪৭ সালে বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী একটা বিরোধী অপশক্তির শৃঙ্খলে আবার বন্দী হলো বাঙালি জাতি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে সংগ্রহাম করে মুক্তির পথে খুঁজছিল বাঙালি জাতি।১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসকের প্রথম বলির শিকার হন ভাষা শহীদ রফিক,শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত প্রমুখ।১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার জয়লাভ, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন হতে ১৯৬৬সালের৬ দফা আন্দোলন। ৬দফা মূলত বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবি হলেও পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী একে মেনে নিতে পারে নি। দেশের নেতৃবৃন্দকে জেলে আটকে রাখা হলো।তখন শুরু হয়ে ছাত্র সমাজের ১১দফা আন্দোলন। দেশের জনগণের ও ছাত্রদের যৌথ আন্দোলনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।বাঙালি যেমন শান্তিপূর্ণ্রিয় জাতি তেমন বীর জাতি।তাইতো-
“বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া
আমরা বাঁচিয়া আাছি,
আমরা হেলায় নাগের নাচাই
নাগেরি মাথায় নাচি।
১৯৬৯ সালের নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন। ১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসন লাভ করে জয়লাভ করে। ১০ দিন পর ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৩১০ টি আসনের মধ্যে ১৯৮টি আসন লাব করে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ।এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গড়িমসি এবং ভুট্টোর ভেটো অব্যাহত থাকে।অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১ লাগে মার্চ থেকে ২৫ শেষ মার্চ পর্যন্ত নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে। লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামে”” যার যা কিছু আছে “” তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার আহ্বান জানানো হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অন্ধকার রাত্রিতে পাক-হানাদার বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় অতির্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।তারা নির্বিচারে চালায় নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যাযজ্ঞ।২৫ মার্চ রাতে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।২৬ শেষ মার্চ যার যা আছে তাই নিয়ে সর্বত্র শত্রুর মোকাবেলা শুরু হয়।শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও নেতৃবৃন্দ আত্নগোপন করে যে যেভাবে পেরেছে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে একত্রিত হন।গ্রামে-গঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্র, শ্রমিক,কৃষক, সৈনিক, পুলিশ, আনসার সবাই মিলে যার যার অঞ্চলে আঞ্চলিক কমান্ড তৈরি করে বিক্ষিপ্তভাবে শত্রুর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। কতিপয় বিবেকহীন বিশ্বাসঘাতক আলবদর, রাজাকার, আল-শামস,ছাড়া গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।২৬ মার্চ চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের স্থানীয় জননেতা আবদুল হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। কিন্তু এ ঘোষণাটি দেশের সর্বস্তরে পৌঁছাতে ও আলোড়ন সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে।২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ইথারের তরঙ্গরাশিতে প্রচারিত হওয়ায় বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনা জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল এরকম :
This may be my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, told resist the army of occupation to the last. Your fight must good on until the last soldier of the Pakistan Occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
অনুবাদ :এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা,আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্থান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।(সূত্র :অসমাপ্ত আত্মজীবনী)দুই তিন মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিক্ষিপ্ত ও অসংগঠিত অবস্থায় স্বত:স্ফূর্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ চলতে থাকে।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ  নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী,এম.মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী,এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং খন্দকার মোশতাক আহমদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে মুজিব নগরে বসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়ে।১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা আমবাগানে””মুজিবনগর “” নামকরণ করে সেই মুক্ত ভূখণ্ডে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন।উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক সনদ পাঠ করেন এম.এন.এ মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।ঐ অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করেন মেজর জিয়াউর রহমান।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি কলকাতার থিয়েটার রোডের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বের সশস্ত্রবাহীনী ও মুক্তিবাহিনীর কর্মকর্তাদের একটা সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধের সুবিধার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং প্রতি সেক্টরের জন্য সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়ে। এতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও তীব্র আকার ধারণা করতে থাকে।এমনিভাবে ৯ মাস যুদ্ধের শেষে পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর বিকেলে কলকাতার গড়ে মাপ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একটা বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। এই সময় খবর আসে পাকিস্তান ওয়েস্টার্ন সেক্টরে ভারতকে আক্রমন করেছে।৪ঠা ডিসেম্বর হতে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনী সাথে মিএবাহিনী গঠন করেযৌথ আক্রমণ শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।দেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনী মরণকামড় দিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। পাকবাহিনীর সমর্থনে মাঝের্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর হতে মাঝের্কিন সপ্তম নৌ-বহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রেরণ করে।আমাদের পক্ষ নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সপ্তম নৌ-বহরকে অগ্রসর না হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে।এ নিষেধ উপেক্ষা করে সপ্তম নৌ-বহরকে যদি বঙ্গোপসাগরে পাঠানো হতো তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতো।পরাজয় বুঝতে পেরে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পাকবাহিনী আলবদর,আলবদরশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।এদিকে  ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মান কেশর নির্দেশে ভীতসন্ত্রস্ত ও পরাজিত পাকবাহিনী জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে মিএবাহিনীর প্রধান লেঃজেনারেল জসজিৎ সিং আওরোরার কাছে ৯৩ হাজার সেন্য নিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১সালে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে।
লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা। তাইতো আধুনিক কবি শামসুর রহমানের ভাষায়-
“” স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা শোভিত শ্লোগান মুখর ঝাঁঝালো মিছিল
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। “”
রক্তেকেনা এ স্বাধীনতা বাঙালির জীবনে যেমন গভীর তেমনি ব্যাপক।স্বাধীন হবার পর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্টপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম একটা বেতার ভাষণে বলেছিলেন-
“” আমার প্রিয়ভাইয়েরা,আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করি সেসব শহীদদের, সেসব অসীম সাহসী বীর যোদ্ধাদের, যারা তাদের আত্মদানের জন্য অমর হয়েছেন, তারাই আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন চিরকাল। “”
ভুল বোঝাবুঝি, মিথ্যার বেসাতি, ক্ষমতার লোভে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। বিকৃত হচ্ছে অবদান।শত সহস্র মাঝে বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে গড়া এদেশ কোথায় গিয়ে দাড়ায় তার আজ বিবেচনার বিষয়।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে গান ও নাটকে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার উপর কেন্দ্র করে। আমাদের দেশাত্নবোধক গানের ক্ষেত্রেএক নতুন জোয়ার এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।অসংখ্য গীতিকার রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথা তাদের গানে।তবে আমাদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়ে নি।খুব সামান্য সংখ্যক চলচ্চিত্রেই মুক্তি্যুদ্ধের গৌরবগাঁথা প্রকাশ পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে এক নবতর সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের কবিতাচর্চা তথা সাহিত্যচর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে তার পেছনে বড় প্রেরণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।তাই-
“স্বাধীনতা হবে স্বাধীনতা
আমার প্রতিটি রক্তকণায়
এক উজ্জ্বল অনুভূতি। “
মূল্যবোধ হচ্ছে সমাজ কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য উপাদান। শাব্দিক অর্থে Values বলা মূল্যবোধ অর্থ তুলনামূলক অর্থমূল্য বলা অন্তনির্হিত গুণাবলি। মূল্যবোধ হলো মানুষের সমাজ স্বীকৃত এমন কার্যক্রম বলা আচরণ যা সামগ্রিকভাবে প্রশংসিত হয়ে।এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নেয়।স্থান ও সময়ভেদে মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়ে।সুতরাং বলা যায়-
১.মূল্যবোধ হলো ভাল বলা মন্দ সম্পর্কে সামাজিক ধারণা।
২.কাঙ্ক্ষিত বলা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে সমাজের বিশ্লেষণমূলক রায়।
৩.সমাজের মানুষের সাধারণ আচরণ যাতে আবেগ বিদ্যমান।
রাজনৈতিক কতৃত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষিত হয় স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের যে চার নীতি ঘোষণা করেন। সেগুলো হলো-
১.ধর্মনিরপেক্ষতা
২.গণতন্ত্র
৩.জাতীয়তাবাদ
৪.সমাজতন্ত্র
কিন্তু স্বৈরাচারী শোষকগোষ্ঠীওসম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী বিশ্বমোড়লরা থেমে থাকে না।তারা সুকৌশলে সামরিক কর্মকর্তাদের নানা অজুহাতে উত্তেজিত করে। ফলে বাদ পড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা।সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে স্বীকৃতি পায় অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার।এতসব ভাঙা-গড়ার মধ্যে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়ে নি।জননেত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধন বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।যেমন-
১.একটি বাড়ি একটি খামার
২.গৃহহীনে গৃহ দান
৩.অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহের ব্যবস্থা
নারীর অধিকার স্বীকৃতি, পুরুষতান্ত্রিকতার অবসান,শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলে অর্থাৎ মূল ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না হলে সমতার প্রত্যাশা পূরণ হবে না।সেই লক্ষ্যে সরকারকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থেকে কাজ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। ছড়িয়ে দিতে হবে শিক্ষার আলো আমরা পূরণ করতে পারবো আমাদের প্রত্যাশা।
মানুষের জন্যই রাজনীতি, মানুষের জন্যই ধর্ম,ধর্মের জন্য বলা রাজনীতির জন্য মানুষ নেয়।এ সত্যটি যতদিন আমরা উপলব্ধি করতে না পারবো, ততদিন সমাজ থেকে হানাহানি, নৈরাজ্য দূর হবে না। কীভাবে আমরা ভুলে যাই প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে লাখো প্রাণের একটা নদী রক্ত আর সম্ভ্রেমের বিনিময়ে অর্জন করেছে এ নতুন মানচিত্র, অর্জন করেছে জাতীয় সংগীত, লাল সবুজের পতাকা। যদি আমরা স্বাধীনতা থেকে বিপন্ন হই, তাহলে মানবাধিকার বলি,সামাজিক -রাজনৈতিক -অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলি,সবই সুদূরপরাহত হয়ে যায়। তারপর ও সকল ব্যর্থতা ও গ্লানি মুছে ফেলে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে–এটাই সকলের কামনা। আজও বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখছে নতুন প্রভাতের ; নতুন জাগরণের ; নতুন সূর্যের।কবির ভাষায়-
“সাবাস বাংলাদেশ
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়,
জ্বলে -পুড়ে-মরে ছারখার,
তবু মাথা নোয়াবার নেয়।”