বিএনপির রুহুল কবির রিজভি বলেছেন সরকার দেশে করোনার মৃত্যুর মিছিল বাড়ানোর পথে হাঁটছে। রিজভিদের এসব কথা নিয়ে দেশের মানুষ ভাবেনা। কারন
ক্ষমতাসীন সরকার কখনও নাগরিকদের মৃত্যু চায় না।
মহামারীর মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবেনা। এটা কতো কমে আটকে রাখা যায় সে চেষ্টা করছে সরকারের সব সংস্থা। আমার ধারনা দিন শেষে সরকার মানুষের জীবিকার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বেশ কিছুদিনে স্পষ্ট দেশের সিংহভাগ মানুষও এটা চাইছে। মানুষকে নানান ধরনের সাহায্য দিয়ে সরকার ঘরে রাখার চেষ্টা করেছিল। মানুষ তা শোনেনি। সে কারও সাহায্য নির্ভর জীবন নয়, তার জীবিকার কাজটি নিজেই করতে চায়।
সে জানে সরকার বা কেউ তাদেরকে দীর্ঘদিন বসিয়ে খাওয়াবেনা বা পারবেনা।
যেমন কয়রার মানুষ ত্রান চায় না বাঁধ চায়। এই অনভ্যস্ত করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রামের এ পর্যায়ে এসে মানুষের মোড়বদল স্পষ্ট হয়েছে।
দেশের মানুষের মনোঃজগতে বিশেষ এক পরিবর্তন এসেছে। আমরা তা ধরতে পারেনি। মানুষকে পড়তে পারার এ দিকটায় আমরা পিছিয়ে। অথবা এ মানুষের মনের এ পরিবর্তনটা পড়তে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মানুষকে তাদের মতের বাইরে কারও কথা বা বাধা শুনছেনা তা তিনি এবং তাঁর উপদেষ্টারা এটি বুঝতে পারছেন। গত বেশ কিছুদিন ধরে মানুষের মনের বার্তাটি হলো, তারা এখন আর কারও কথা শুনছেনা বা কাউকে নির্ভর করতে চাইছেনা।
এদেশের মানুষ আগে জানতো কথা না শুনলে পুলিশ-সেনাবাহিনী পিটায়। কিন্তু পুলিশ-সেনাবাহিনী যে উল্টো গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কথা বলে, চাইলে খাবারও বাড়ি পৌঁছে দেয়, মরার কবরও দিয়ে দেয় এসব দেশের মানুষ জানতোনা।
মানুষকে বোঝাতে গিয়ে এখন পুলিশের হাজার হাজার সদস্য করোনায় আক্রান্ত।
এ খবর তাদের কাছে নেই এটা ভাবার কোন কারন নেই। কিন্তু এটাও সত্য
পুলিশ-সেনাবাহিনীর পরবর্তিত এই মানবিক রূপ দেশের মানুষ সেভাবে গ্রহন করেনি।
হয়তো এটিও আমরা জানতে বুঝতে পারছিনা। কারন নর্মালি দেশের আমজনতা তাদের মার খেয়ে অভ্যস্ত। অথব পুলিশ আর সেনা সদস্যরাও তাদের কিভাবে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে চেয়েছে-চাইছে, এই উপলদ্ধিটাও একদিন তাদের ভেতর থেকেই আসবে।
অথবা বিষয়টিকে দেশের মানুষের চলমান মন নিয়ে আমরা যেভাবে ভাবছি আসল সারবত্তা এসবের কিছুই নয়। দিন শেষে মানুষ নিজের জীবিকার কাজটি এখন নিজেই করতে চায়। আর চায় সরকার তার কাজে বাধা না দিক।
এরজন্য সরকারি বাধা তারা কোনভাবেই পছন্দ করেনি। গাড়ি বন্ধ দেখে হেঁটে রিকশায় ভ্যানে যেভাবে পরেছে ঢাকা রওয়ানা হয়ে গেছে! কেনো তারা কারও কথা শোনেনি এ নিয়ে আমরা কখনও কোন জরিপও চালাইনি!
আমরা শুধু ভেবেছি আমরা পন্ডিত অথবা পন্ডিতনমন্য! আমাদের কথা তাদের শুনতেই হবে। ব্যাস! এটিই আমাদের গণতন্ত্র! এটিই আমাদের এথিক্স! কিন্তু এটিই যে গণতন্ত্র নয় এটা আমাদের কেউ বিবেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভাবিনি।
ভাবার চেষ্টা করিনি। বংশ পরষ্পরায় দেশের আমজনতা ঈদে বাড়ি গিয়ে অভ্যস্ত। এক ঈদে বাড়ি যাওয়া ছাড়া তাদের জীবনে কোন বিনোদনও নেই। পরিজনের সঙ্গে একসঙ্গে একটু ভালো খাওয়া। ঈদ সংখ্যা স্ত্রী সঙ্গম করা। ব্যাস!
আর বেশি কিছু চাহিদা তাদের জীবনে নেই। আমরা তাদের মনের কথা জানার চেষ্টা করিনি। কেনো আইজিপি বললেন যাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই বসিয়ে রাখা হবে। ঈদ হবে সেখানেই! এসব মানুষ পছন্দ করেনি।
আইজিপি নিশ্চয় তাদের ভালোর জন্যে বলেছিলেন। ভালোটা তাদের কাছে পৌঁছেনি। তারা পত্রিকা পড়েনা টিভির নিউজ শোনেনা। অত সময় তাদের নেই। এসবের কোন প্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যে নেই।
তারা পড়ে ফেসবুক। ভিডিও ক্লিপ দেখে ফেসবুকে-ইউটিউবে। সেখানে সরকারের মিডিয়ার ভালো ভালো কথা নয় ওয়াজের ক্লিপ দেখা শোনা যায়। এসব ওয়াজের ক্লিপ যারা বানায় ছাড়ে তারা এই টার্গেট গ্রুপকে জানে।
তারা সচেতন ভাবেই তাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। সরকার এদের অপপ্রচারের গায়ে হাত দেয়না। সাতান্ন ধারা দেখায়না। সাতান্ন ধারা যাদের দেখায় তাতে সরকারের উপকার হয়না।
করোনার মৃত্যুভয় দেশের আমজনতাকে কাবু করতে পারেনি। কারন নিত্যদিন সে নানান মৃত্যু দেখে অভ্যস্ত। সড়ক-নৌ দূর্ঘটনা সহ নানা কিছুতে এরচেয়ে বেশি লোক বাংলাদেশে বছরে মরে।
অথবা মরে ক্রসফায়ারে। সেখানেও একটি মুখস্ত গল্প শুনে তারা অভ্যস্ত। কাজেই করোনা না কী, একে নিয়ে দেখানো মৃত্যু তার মাঝে আর আলাদা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনা।
আর ওয়াজি মাওলানাতো বলে রেখেছে করোনায় মুসলমানের মৃত্যু হবেনা! এটা ইহুদি-নাসারার দল বানিয়েছে। ইহুদি-নাসারার দল এতে মরবে। সরকার এসব ভন্ড লোকজনের বিরুদ্ধে কখনও সাতান্ন ধারার প্রয়োগ দেখায়নি!
সরকার সেদিকে যাবেও না। দিন শেষে সব বুঝে শুনে সরকারও যেন মানুষের পছন্দের জীবিকার পথে হাঁটছে। বাংলাদেশের মতো সরকারেরও বোধকরি সামর্থ্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আসলে দুনিয়ার কোন দেশই আর এ পরিস্থিতির প্রয়োজনীয় লকডাউন স্টাইল আর কনটিনিউ করতে পারছেনা। কেউ জানেওনা এ করোনা পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে। কারন ভ্যাক্সিনের কোন সুসংবাদ নেই।
এরজন্যে বোধকরি সরকারও এখন ত্রানের চাইতে মাস্ক-সুরক্ষা সামগ্রী দেশের মানুষকে এখন বেশি বেশি ফ্রি দেবে। মানুষের জীবিকার পরিবেশ, মানুষের জীবনকে কিভাবে স্বাস্থ্য সম্মত করা সম্ভব, তা নিয়ে এখন থেকে সরকার বেশি বেশি ভাববে।
যা আগে কখনো এভাবে বাংলাদেশের সরকারগুলো ভাবেনি। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিকের গানই মমতাজকে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছে। বিএমএ, স্বাচিপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওখানে যে তৃণমূল চিকিৎসার পরিবেশ করেনি, তা এই সময়ে জানা গেলো!
মমতাজের গান আর কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সামর্থ্য যে এক বিষয় নয় তা শেখ হাসিনা নিজে নিশ্চয় এবার বুঝেছেন। সাবেক-বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী পরিস্থিতি করেছেন দেশের স্বাস্থ্যখাতের, এটিও ঢের বুঝতে পেরেছেন মানুষের প্রধানমন্ত্রী।
এখন এর অনেক অবকাঠামোর পরিবর্তন ঘটানোর কাজ শুরু হয়েছে। করোনা কালীন দেশে যে সব ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত করেছে এটিও এর একটি। প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। বিজ্ঞানী নিউটন স্যার বলে গিয়েছিলেন।
দেশের মানুষের এই পরিবর্তনের জায়গাতেও বিএনপির রুহুল কবির রিজভিরা পিছিয়ে। কারন এখানে একজন রিকশা চালক বা গার্মেন্টস শ্রমিকেরও স্বীকৃত একটা আয়-পেশা আছে।
তাদের একেকজন ওভারটাইম সহ মাসে কমপক্ষে দশ হাজার টাকা আয় করে। এর পাঁচ-ছয় হাজার টাকা হয় জমায় বা বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু রিজভিদের কোন স্বচ্ছ আয় নেই। তাদের চাকরি বা স্বীকৃত ব্যবসা নেই।
সংসার তাদের কোন ভূতে চালায় তা কেউ জানেনা। এরজন্যে দেশের লোকজন সরকারের নানাকাজে বিরক্ত হলেও রিজভিদের বিকল্প ভাবেনা। কারন জানে এরা কোন কাজ করেনা। চাঁদা খায়।
যারা পরের চাঁদায় চলে তারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনা। দেশের মানুষ কাজ করে মর্যাদার জীবন চায়। যে কাজ করেনা তাকে তাদেরকে পছন্দ-নির্ভর করেনা। করোনা কালীন বাংলাদেশ এভাবে দেশের মানুষকে নতুন করে চিনতে ভাবতে শিখিয়েছে।