আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই, তখন ৩টা পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে. এভাবে আমার বাকী পরীক্ষা গুলো পার করি. মাকে কাছে পাইনি. হয়তো মাঝে মাঝে পেয়েছি,ছিল বিছানায় আর বাকীটা হাসপাতাল. আর মায়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতাল, দিন দিন অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একসময় জানা গেল মায়ের ক্যান্সার হয়েছে। তত দিন আমার পরীক্ষা শেষ। তখন পুরো পরিবার, বিশেষ করে ছোট বোনদের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। চোখের পানি, নাকের পানি সব কিছু একসাথ করে দিন পার করছিলা। এই একমাসে মায়ের চেহারায় এতোটা পরিবরতন, বলে বোঝাতে পারবোনা। বাবা কি সান্তনা দিবে বাচ্ছাদের মতো সারাদিন কাঁদতো।
আর মা- সে এমন ভাবে কথা বলতো মনে হয় তার কিছুই হয়নি। সে একমাত্র ব্যাক্তি যে সবাইকে সান্তনা দিতো। আর বলতো-আমার কিছুই হয়নি। আর আশে পাশে থেকে পাড়া প্রতিবেশি সবার শুধু একটাই কথা— হায় হায়! মেয়েগুলোকে বিয়ে দিতে পারে নাই, আজ যদি মেয়েগুলোর বিয়ে হতো! আচ্ছা সন্তানের বিয়ে দিলেই বুঝি মা বাবার আর দরকার হয়না? কোথায় মানুষ একটু দোয়া করবে তা না…..
যাইহোক, এভাবে ততদিন মার আমার মোয়াখালি ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে আমার ফলাফল দিলো। সারাদিন বাসায় বসে কাঁদছিলাম একটা কথা ভেবে যে আমার ভাগ্য কেন এত খারাপ! ১০টা বছর এত কস্ট করছে মা, আজকে এই খুশির দিনে মা কেন পাশে নাই! এর মধ্যে ফলাফল পেলাম। গোল্ডেন জিপিএ -৫। বাবাকে ফোন দিলাম খুব খুশি। আর মার কথা আর কি বলবো। কেমোথ্যারাপি দিয়ে আসছে, এখনো ঘুমে, ঘুম থেকে উঠে মা চোখ মেলতেই বাবা বললো আমার ফলাফলের কথা। বাবা বললো – মা তখন হয়তো খুশিতে কাঁদছিলো। ততদিনে মার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু গলায় সমস্যা, তাই কিছুই গিলতে পারে না। সবকিছু নাকি ঝাল লাগে। এমন কি পানিও। এখন আমি কলেজে যোগদান করবো তখন দেখি চাপ কাকে বলে! আত্নীয় স্বজন সবাই বলতেছে ওরে বিয়ে দিয়ে দেও, ওর পড়ে কি হবে! এখন তো মা আছে, কয়দিন পর তো আর বিয়ে হবে না। ছেলেপক্ষ বলবে মেয়ের মা নাই। ভালো বিয়ে হবেনা। একটা সময় বাবাও রাজী হয়ে গেল। বাকী রইলো শুধু মা। সে কোনো ভাবেই রাজী হলো না। তার একটাই কথা – আমার যদি হায়াত না থাকে তবে আমি মারা যাবো কিন্তু আমি মারা যাওয়ার আগেই কেন মেয়ের ভবিষৎ নস্ট করে যাবো! কেউ তাকে রাজী করাতে পারলোনা।
এভাবে আমি এডমিশন নিলাম কুমিল্লা ইস্পাহানিতে। ততদিনে মা আমার ক্যামোথ্যারাপি। রেডিওথ্যারাপি শেষ করলো। খুব দূরবল। মাথায় একটাও চুল নেই। তাও সে বাঁচার সপ্ন দেখেছিলো। এভাবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখ দিয়ে পার করলাম কলেজ। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতিয় বছর। মা আমার এখন আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ। একদম পাঁচ বছর আগের মতো। জীবন এখন রঙিন। আল্লাহর রহমত তাকে সব সময় তাকে ঘিরে রেখেছে। তার আত্নবিশ্বাস, আমার বাবার পরম সেবা যত্ন তাকে বাচিয়ে রেখেছে। কিন্তু সেই দিনগুলো কখনো ভুলার নয়. একটা মানুষ মৃত্যুর মুখ থেকেও বাচার সপ্ন দেখে। আর আপনি আর আমি যাই সামান্য কষ্টে আত্নহত্যা করতে!
১.আপনি আর আমি সামান্য বিপদে পড়লে সব ভুলে যাই বিধাতাকে, যে বিপদ দিয়ে পরিক্ষা করে
২. পরিবারকে সব সময় বেশি গুরুত্ব দিন – সুখের দিনে সবাইকে পাবেন না, বিপদের দিনে শুধু মা বাবা
৩. মা বাবাকে বুঝতে শিখুন – তাহলে তারাই আপনাকে বুঝবে
৪. কখনো অতীত ভূলে যাবেন না।