খালেদা জিয়া’র স্বাস্থ্য

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত টিপসও পাওয়া যায়। এমন একটি টিভি চ্যানেলে শুনছিলাম যাদের কোমরে এবং হাঁটুতে ব্যথা তাদের রোজা রেখে নানা সমস্যা হতে পারে।এরজন্যে ফিজিও থেরাপি সহ চিকিৎসকের সমস্যা নিতে বলা হয়েছে। আর্থাইটিসের রোগিনী হিসাবে এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার আছে। কিন্তু বিএনপি নেতারা এই সম্যাগুলো যেভাবে মানুষের সামনে বলেন তা শুনলে মনে হবে খালেদা জিয়া এমনি এমনি এখন বিছানা থেকে নামতে পারেননা। অথচ খালেদা জিয়ার আর্থাইটিসের সমস্যা কুড়ি বছরের বেশি পুরনো। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় আসেন তখনও তার হাঁটাচলায় সমস্যা ছিল। সংসদ ভবনের ভিতর তাঁর খুড়িয়ে হাঁটার দৃশ্য লংশটে একুশে টিভিতে দেখানোর অপরাধে তখন টিভি চ্যানেলটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়ার হাঁটুতে এরমাঝে বিদেশে দু’বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর্থাইটিজের এটিই সর্বোচ্চ চিকিৎসা। এখন ফিজিও থেরাপি, বেদনাশক ওষুধ ছাড়া খালেদা জিয়ার বিকল্প কোন চিকিৎসা নেই। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে আসছেনা? এরজন্য একজন রোগীকে নিয়ন্ত্রিত খাবারের পাশাপাশি হাঁটাচলা অথবা নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। খালেদা জিয়ারতো এসব মেনে চলার কথা।

বিএনপি নেতারা আরেকটি কথা বারবার করে বলছেন তাহলো সাজানো মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার করা হয়েছে, আটকে রাখা হয়েছে! মামলাটি যে সাজানো না তা বিএনপি নেতারাও তা জানতেন বলে এই দুটো মামলা বিলম্বিত করতে বারবার সময় পেছানো, হাজিরার দিন দেখে হরতাল দেয়া, বারবার এই কোর্ট না সেই কোর্ট বলে হাইকোর্টে যাওয়া হয়েছিল তা কী দেশের সব মানুষ ভুলে গেছেন? কারন তারা জানতেন এ দুটি মামলার অকাট্য দালিলিক প্রমান আছে। এই প্রমানগুলো দীর্ঘদিন চুপচাপ সংগ্রহ করে রেখেছিল সেনা গোয়েন্দা সংস্থা! এমনকি গায়েবি এতিমখানার ঠিকানা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়ি।

ঘটনা বিএনপির ১৯৯১-৯৬ শাসন সময়ের। মাঝে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও তারা এই অনিয়মের হদিস পায়নি। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি এতিমখানা বানায়নি। যে যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের মনে হয় ক্ষমতা বুঝি সারাজীবনের। কেউ কোনদিন কিছু জানবেনা! এরপর ১/১১’র সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জমা থাকা দালিলিক প্রমানসহ মামলা দুটি তারা দায়ের করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই মামলার বিচার নিয়ে তাড়াহুড়া করেননি। যতভাবে খালেদা জিয়া মামলার বিচার বিলম্বিত করতে চেয়েছেন সব সুযোগ তাকে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার ইচ্ছা ছিল এরমাঝে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হবে আর তিনি পার পেয়ে যাবেন। তারা নানান কায়দায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আর আওয়ামী লীগতো রামকৃষ্ণ মিশন না যে সুযোগ পেয়ে প্রতিপক্ষকে ছেড়ে দেবে। খালেদার পাওনা জামিন দেয়া হচ্ছেনা বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা অসত্য নয়। যেমন সত্য ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি পাঁচবছর আটকে রেখেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। তখনও কিন্তু কোর্টের দোহাই দেয়া হয়েছে।

আরেকটা বহুল প্রচারিত বক্তব্য হচ্ছে যেখানে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে সেখানে ২-৩ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিচার হয়েছে! এ বিষয়টিও বিভিন্ন সময়ে লিখেছি। তাহলো ২-৩ কোটি টাকার অভিযোগ প্রমান করা সহজ। হাজার হাজার কোটি টাকার অভিযোগ প্রমান করা কঠিন। কারন হাজার হাজার কোটি টাকা কোন বৈধ চ্যানেলে বিদেশে পাচার সম্ভব নয়। বিদেশেও এসব টাকা অলস লুকিয়ে রাখতে হয়। নতুবা খরচ করতে হয় ধীরে সুস্থে।

এরশাদের পতনের পর দেশেবিদেশে তার পাচার করা অর্থ সম্পদ উদ্ধারের অনেক চেষ্টা করেও বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রকাশ পাচ্ছে দেশেবিদেশে এরশাদের এত টাকা-সম্পদ! যা তিনি উইল করে অমুকে অমুককে দিচ্ছেন! ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপির হাওয়া ভবন দূর্নীতির বড় কোন টাকা কী উদ্ধার করা গেছে? বছরের পর বছর ধরে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করেন তারেক রহমান। অথচ তিনি কোন কাজ করেননা। বিদেশে কাজ করার যোগ্যতা তার নেই। বিদেশের জীবন কত ব্যয়বহুল, কত কষ্টের কাজ করে টাকাকড়ি কামাই করতে হয় তা ওয়াকিফহালরা জানেন। কিন্তু কোন বৈধ আয়ের উৎসবিহীন তারেকগং বিলাতের মতো ব্যয়বহুল দেশে এই বাড়ি কিনেন সেই বাড়ি কিনেন! টাকা কী ভূতে জোগায়? আওয়ামী লীগ দাপুটে শাসন চালাচ্ছে, কিন্তু তারেকের অর্থবিত্তের বুড়িও ছুঁতে পেরেছে কী? হাজার হাজার কোটি টাকার মাজেজা এখানেই লুক্কায়িত।