চীন ভারত যুদ্ধ বাংলাদেশের ফেসবুকে!

হিমালয় দুহিতা লাদাখের বিরোধপূর্ন সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ভারত-চীনের যুদ্ধ যুদ্ধ দ্বন্দ্ব নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় এখনও যে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু তা এখন আর চীনা মিডিয়ায় নেই। কারন চীন একটি নিয়ন্ত্রিত লাল পতাকার দেশ।  

সরকারি বক্তব্যের বাইরে যা খুশি সেখানকার মিডিয়ায় লেখা যায়না। ফেসবুকও নিষিদ্ধ চীনে। তাই এই ইস্যুতে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক লোকজন যে ফেসবুকে তাদের পক্ষে লিখছে তাও চীনারা জানেনা।

ইরাক যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পতনের এক সপ্তাহ পর বাগদাদ থেকে আমি আমার পত্রিকাকে বললাম এখানেতো এখন কোন যুদ্ধ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়ায়তো এখনও যুদ্ধ থামছেইনা।

আমার সম্পাদক তখন মজা করে বলেন বাংলাদেশের মিডিয়ায় যুদ্ধ দেরি করে শুরু হয়েছিল। তাই থামতেও দেরি হচ্ছে। ইরাক থেকে তখন রিপোর্ট পাঠানো অব্যাহত রাখতে তখন আমি সারা ইরাক চষে বেড়ানো শুরু করি।

এমন ভারতীয় মিডিয়া কখনও সুযোগ পেলে তা পাকিস্তান সীমান্তে হোক বা চীন সীমন্তে হোক তা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দীর্ঘদিন তা চালাবেই। অভিনন্দন নামের ভারতীয় বিমান বাহিনীর সেই কর্মকর্তার কথা নিশ্চয় সবার মনে আছে।

পাকিস্তানিরা হামলা করে তাঁর যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করলে তিনি পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েন। দুই দেশের আলোচনায় পাকিস্তান তাঁকে ফেরত দেয়। সেই অভিনন্দন দেশে বীরের বেশে ফেরত আসেন।

তার শরীরে আবার পাকিস্তানিরা কোন গোয়েন্দা চিপ ঢুকিয়ে দিয়েছে কিনা তা নিয়ে অবশ্য দেশে তাকে বড় শরীর-স্বাস্থ্য পরীক্ষা পর্ব পাড়ি দিতে হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে আবার বাংলাদেশের মিডিয়ার মধ্যে একটি মৌলিক ফারাক আছে।

তাহলো কোন একটি ভারতীয় মিডিয়া ভারতের স্বার্থ বিরোধী কোন একটি শব্দ কোথাও প্রকাশ বা প্রচার করবেনা। বিদেশে গেলে কোন ভারতীয় রাজনীতিকের মুখ দিয়েও বের করতে পারবেননা তাদের দেশের স্বার্থ বিরোধী কোন শব্দ।

মমতা ব্যানার্জি যখনই ঢাকায় এসেছেন তাঁকে দিয়ে তেমন কিছু বলানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কেউ সাফল্য পায়নি। এমন কি তাঁর জাত শত্রু বিজেপি সরকার নিয়েও বাংলাদেশে এসে কখনও কোন বিরূপ মন্তব্য করেননি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু এসব নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া বা রাজনীতিকদের কোন বাছ বিচার নেই। বিদেশে বসে দেশের যে সব মিডিয়ার অনলাইন সংস্করন আমি দেখি এর একটি মানবজমিন। বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে পত্রিকাটির সম্পর্ক ভালো।

সে কারনে বিএনপি জামায়াতের মনের খবর পড়তে জানতেই আমি  মানবজমিন পড়ি। আরেকটি বিষয়ে পাওয়া যায় মানবজমিনে। বাংলাদেশ সম্পর্কে পৃথিবীর কোন মিডিয়া খারাপ লিখেছে বা বলেছে তা আপনি সবিস্তার মানবজমিনে পাবেন!

কেউ ভালো বললে সেটা কিন্তু পাবেননা! বিদেশে আমি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করেছি। এখনও সারাক্ষন সুযোগ পেলেই পড়ি। কিন্তু এমন দেশের স্বার্থ বিরোধী প্রচারনায় মত্ত দ্বিতীয় কোন সংবাদপত্র আপনি কোথাও পাবেননা।

বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে যে দুটি পত্রিকা সবচেয়ে বেশি সরকারি বিজ্ঞাপন পেতো মানবজমিন এর অন্যতম। এখন পায় না। বাংলাদেশের সরকারি বিজ্ঞাপন দেবার প্রক্রিয়াটি দূর্নীতি এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত দুষ্ট।

An Indian army convoy moves on the Srinagar- Ladakh highway at Gagangeer, north-east of Srinagar, India, Wednesday, June 17, 2020. Indian security forces said neither side fired any shots in the clash in the Ladakh region late Monday that was the first deadly confrontation on the disputed border between India and China since 1975. China said Wednesday that it is seeking a peaceful resolution to its Himalayan border dispute with India following the death of 20 Indian soldiers in the most violent confrontation in decades. (AP Photo/Mukhtar Khan)

এরজন্যে এখানে সর্বোচ্চ প্রচার সংখ্যার ভিত্তিতে সরকারি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়না। একই পক্ষপাতের কারনে তখন মানজমিন বিপুল অর্থমূল্যের বিজ্ঞাপন পেয়েছে। এখন পায় না। এর রাগ প্রতিদিন প্রকাশ করে মানবজমিন। তা দেশ বিরোধীও হয়।

এখন এই করোনা দূর্যোগের সময় কেউ বাংলাদেশ থেকে নিজের দেশে গেলে পত্রিকাটি লিখবে অমুক অমুক দেশ তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে! আর বিদেশ থেকে বেকার শ্রমিকরা দেশে আসলে লিখবে অমুক অমুক দেশ ফেরত পাঠিয়েছে!

 শুধু একটা সরকারের ওপর রাগ থেকে একটি পত্রিকা কিভাবে দেশ সম্পর্কে সব নেতিবাচক খবর ফলাও করে প্রকাশ করা, শিরোনামে চাতুর্য দেখাতে পারে, এটা কোন সাংবাদিকতা তা আমার মাথায় কুলোয়না।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ান তারা হয়তো এর আরও বিশদ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।  লাখাদ ইস্যুতে ভারত-চীনের দ্বন্দ্বেও বাংলাদেশের মিডিয়া নানা রকম রিপোর্ট করেছে।

বাংলাদেশে যেহেতু ভারত বিরোধী জনমত এখন প্রবল সে বিবেচনাও কাজ করেছে এসব রিপোর্টে। কিন্তু একটি তথ্য কিন্তু প্রায় সবাই সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন! তাহলো এই লাখাদ নিয়ে একাত্তরে ভারতীয়দের সতর্ক চিন্তা।  

একাত্তরে বাংলাদেশের যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করতে ভারতীয় একটি চিন্তার নাম ছিল দেশটির সঙ্গে ওই এলাকার বরফাচ্ছিদিত চীন সীমান্ত। ভারতের ভয় ছিল শীত শেষে হিমালয়ের বরফ গলে গেলে ওই এলাকাটি বিপদজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

 তাদের আশংকা ছিল শীতের শেষে ওই পথ দিয়ে চীনা সেনাবাহিনী পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে মার্চ করতে পারে। অথবা সেই সীমান্তে ভারতকে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিতে পারে চীন। এরজন্যে তারা ডিসেম্বরের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

 বাংলাদেশের যুদ্ধে ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ছিলেন জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। যার কাছে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পন করেছিল। সেই জেনারেল এক ইন্টারভ্যুতে তথ্যটি আমাকে বলেছিলেন। যে সাক্ষাৎকার জনকন্ঠে ছাপা হয়েছিল।

সম্প্রতি বাংলাদেশি পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত প্রবেশের যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেটিকে কটাক্ষ করে আনন্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্টে লেখা হয়েছে, বানিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাবার চেষ্টা করছে চীন!

এ নিয়ে বাংলাদেশের নেটিজেনরা ভীষন সক্রিয়। বাংলাদেশ থেকে যারা আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেন তাদের ধুয়ে দেয়া হচ্ছে! যদিও এরসঙ্গে বাংলাদেশের রিপোর্টারদের বিন্দু বিসর্গও সংশ্লিষ্টতা নেই।

এই তালিকার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই লাখাদ দ্বন্দ্বেরও। কারন এই শুল্ক সুবিধা চীন শুধু বাংলাদেশকেই দেয়নি। কয়েকটি দেশের সঙ্গে সেখানে বাংলাদেশেরও নাম আছে। কাকতালীয়ভাবে এই সময়ে তালিকাটি ঘোষনা করা হয়েছে।

আনন্দবাজার এই সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলানোর চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের হিসাব বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশের জন্যে যেটা ভালো সেটিই করবে বাংলাদেশ। আনন্দবাজার কী লিখেছে না লিখেছে সেটা এখানে ম্যাটার করবেনা।

আর চীন শুল্কমুক্ত ঘোষনা করলেও বাংলাদেশের অতগুলো রফতানিযোগ্য পণ্য আছে কিনা সেটিও দেখতে হবে। বাংলাদেশ সমুদ্র সীমা জয়ের গৌরব করে প্রায়। কিন্তু আসল সত্য এতে এখনও বাংলাদেশ তাতে কোন লাভের মুখ দেখেনি।

কারন ওই এলাকার সমুদ্র সম্পদ কী আছে না আছে, তা আহরনের পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশের কোন গবেষনাই নেই। সমুদ্র সীমা জয় থেকে সুবিধা পেতে নিতে বাংলাদেশের আগে গবেষনা করতে হবে।

 চীনে শুল্কমুক্ত পণ্য নিয়ে সুফল পেতেও আগে বাংলাদেশকে সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। চীনের জন্যে ফেসবুকে যুদ্ধ করেও লাভ নেই। কারন ফেসবুক নিষিদ্ধ থাকায় চীনারা তাদের এসব বাংলাদেশি প্রেমিক-ভক্তদের দেখতে পায় না।