কৃষকের সব পেঁয়াজ সরকার কিনুক

পেঁয়াজ নিয়ে দেশের পরিস্থিতি জনগনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে সরকারকে। এর কারন আমাদের ব্যবস্থাপনার কাঠামোটি দূর্বল। কারও মাথায় বিকল্প কর্ম পরিকল্পনাটি নেই। সে জন্যে এক ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতেই সরকারের সব কাজকর্মকেই গোলমেলে করে দিয়েছে। উন্নয়নের কথাবার্তা শুনলে এখন মানুষের মেজাজ খিটখিটে গরম হয়। কারন পেঁয়াজের দাম ছাড়িয়েছে আড়াইশ টাকার বেশি। বাজারের নানা পণ্যের দামও সাধারন মানুষের জন্যে অস্তিত্বকর। কষ্টকর। মানুষ ক্ষিপ্ত। কিন্তু কারন সে দেখছে পেঁয়াজ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের পকেটের কয়েক হাজার কোটি টাকা এরমাঝে বেরিয়ে গেছে পেঁয়াজ পরিস্থিতির কারনে। সরকারকে মনে রাখতে হবে শুধু পেঁয়াজ ইস্যুতেই প্রতিবেশী ভারতে সরকার পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশে বছরে ১৯ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এটি দেশের মূল চাহিদার ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসে। এর ৯৫ শতাংশ আসতো ভারত থেকে। কিন্তু ভারতে বন্যাজনিত কারনে উৎপাদন ব্যাহত হলে তারা সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে বাংলাদেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমজনতা সবাই ভারতের ওপর চরম গোস্বা। সুযোগ পেলেই বলেন, ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায়—! আরে মিয়া সবাই নিজের দেশের ভোটার স্বার্থ চিন্তা করে আগে। বাংলাদেশকে খুশি করতে গিয়ে যদি ভারতে সরকার পড়ে যায় তাতে নরেন্দ্র মোদীর কী লাভ? আগে নিজের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ান। যাতে ভারত বা কোথাও থেকে পেঁয়াজ বা কোন কিছু আনতে না হয়। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যার কৃষক ফসল বেশি ফলালে উৎপাদন ব্যয় তুলতে না পেরে সে হয় ফতুর অথবা ঋণগ্রস্ত হয়। কৃষক এখানে ধান উৎপাদন করে ২ কোটি মেট্রিকটনের বেশি। সরকার ৬ লাখ মেট্রিকটন ধান কেনার ঘোষনা দিয়ে বগল বাজায়! এই ৬ লাখ মেট্রিকটনও প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে কেনার কোন গ্যারান্টি নেই।

বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে চাইলে নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে কৃষকের পাশে। কৃষক যেন কোথাও বেশি উৎপাদন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কৃষক যাতে কোথায় না ঠকে। আমি বক্তৃতা দিলাম দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আর কৃষক দাম পেলোনা, এটা নিরর্থক। বক্তৃতা যদি দিতেই চান তাহলে প্রতি মওসুমে কৃষকের সব পণ্য তার উৎপাদন খরচ দেখে তাকে লাভ দিয়ে সরকারকে কিনতে হবে। এখন ঘোষনা দিয়ে তার খেতের সব পেঁয়াজ কিনুন। অথবা এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে সরকার নির্ধারিত দামের কমে কৃষক থেকে কোন পণ্য কেউ কিনতে না পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশের বড়াই করেন, কেনাবেচার সবকিছুও ডিজিটাল করুন। কত দিয়ে কিনলেন কত দিয়ে বেচলেন সবকিছুর ডকেট থাকবে অনলাইনে। যত বেশি দামে বেচবেন টেক্স দিতে হবে তত বেশি। তখন লোভী মজুতদার-মুনাফাখোরদের ধরা যাবে।

এখন ঠেকায় পড়ে আপনি মিসর-তুরস্ক থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আনেন। ভূর্তকি দিয়ে সেই পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে ৪৫ টাকা কেজিতে বেচেন। বিমানে পেঁয়াজ উঠে গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষনায় একদিন হুড়হুড় করে দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় সেই ওষুধে কাজ দেয়নি। বিমানে পেঁয়াজ বেশি আসেওনি। দরকার দশ লাখ মেট্রিক টন, আর চালাকি করে অত হাজার টন আর অত গাড়িতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় নাকি।

 পরিস্থিতি সামালের একটি ঘোষনা এখনই দিন। তাহলো আগামী তিন বছর দেশের কৃষকদের উৎপাদিত সব পেঁয়াজ সরকার কিনে নেবে। দেখবেন কৃষক আপনাকে জান দেবে। বাংলাদেশের এই একটি মাত্র গোষ্ঠী কৃষক, যারা কোনদিন কাজে ফাঁকি দেয়না। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে প্রতিদিনের সব কাজ করে যায়। কিন্তু সে ফসলের দাম পায় না। আপনারা পেঁয়াজ বিমানে আনতে যত ভূর্তকি দিচ্ছেন, বেশি টাকায় পেঁয়াজ কিনে এনে ৪৫ টাকায় টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছেন, এই ভূর্তকি কৃষককে দিন। দেশে পেঁয়াজ সংকট থাকবেনা। ভারতে বন্যা দেখা দিলে তাদের ত্রান হিসাবেও পেঁয়াজ পাঠাতে পারবেন। এখনতো মাঝে মাঝে ইলিশ কূটনীতি-জামদানি কূটনীতি করেন, তখন করবেন পেঁয়াজ কূটনীতি।

দেশে কৃষক বঞ্চনার মুখস্ত কিছু শব্দ-চরিত্র আছে। তাহলো ‘ফড়িয়া’, মধ্যস্বত্ত্বভোগী! বলা হয় কৃষকের লাভের গুড় সব এরাই খায়! কিন্তু এত ক্ষমতা আপনাদের, এরা যারা দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা  কৃষকদের যুগের পর যুগ শুধু  ঠকিয়েই যাচ্ছে, এদের আপনারা ধরতে পারেননা কেনো? না এদের সবাই আপনাদের দল করে? মন্ত্রী ঘোষনা দিয়ে বলেন, অমুক অমুক মিল মালিক সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ায়! আপনি মন্ত্রী কী ঘাস কাটেন? না সিন্ডিকেট একজন মন্ত্রীর চেয়ে শক্তিশালী? না এরা সবাই আপনাদের দল করে? সাফ সাফ কথা বলেন। দেশের মানুষ খুব বিরক্ত। দেশজুড়ে আপনারা এত উন্নয়ন করেছেন কিন্তু বাজার নৈরাজ্যের কারনে সবকিছু হারাতে বসেছেন। আরেকটা কথা এই সুযোগে বলে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে কিছু ছাগলকে সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। কিন্তু যখন বুঝতে পারেন ছাগল দিয়ে হালচাষ হয়না, হালচাষের জন্যে গরু লাগে তখন এদের পাল্টে আবার পুরনো অভিজ্ঞদের আনেন। এই পরীক্ষা্নিরীক্ষায় মাঝখানে ভোগান্তি যায় দেশের আম-জনতার। এবার যাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদের একজনের নাম কী এখন পর্যন্ত বলা যাবে যারা তার দায়িত্বে সফল?

এখন পেঁয়াজ নিয়ে কৃষক বান্ধব একটা ঘোষনার পাশাপাশি পেঁয়াজ-টমেটো এসব রাখার মতো হিমাগার বানাতে হবে দ্রুত। আলু যে সব হিমাগারে রাখা হয় পেঁয়াজ সেখানে রাখা সম্ভব নয়। পেঁয়াজ রাখার হিমাগারে ৬০% আদ্রতা প্রয়োজন। তাপমাত্রা লাগবে ৮ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাংলাদেশে এমন নানান কৃষিপণ্যের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন হিমাগার প্রয়োজন। মোটকথা সবকিছুতে কৃষককে মুনাফায় রেখে সাজাতে হবে সব পরিকল্পনা। টাকার কথা ভাববেননা। আপনাদের অনেক টাকা। নিজের টাকায় পদ্মাসেতু বানাতে পারেন। দলের দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত-বিক্রি করেও ব্যবস্থা করতে পারেন কৃষককে প্রণোদনার টাকা। কৃষক খুশি থাকলে বাজার খুশি থাকবে। বাজার খুশি থাকলে হাসবে ভোটের বাক্স।