বৃহস্পতিবার অনলাইনে ঢুকতে পেরেছি দেরিতে। এখন প্রতিদিন অনলাইনে বাংলাদেশে ঢুকলেই করোনা নিয়ে নানা রিপোর্ট ছবি দেখি। নাসিম ভাইর অবস্থার অবনতি। ডাঃ জাফর উল্লাহ’র অবস্থার উন্নতি। আজ দেখছি শুধু বাজেট!
করোনা নিয়ে যে কথাগুলো লেখার নিয়ত ছিল তা আগে লিখে নেই। গত কিছুদিন ধরে টেলিভিশনে পত্রিকায় বিরক্তিকর যে প্রসঙ্গ বারবার ঘুরে ফিরে আসে তাহলো করোনায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, ইত্যাদি!
আল্লাহর ওয়াস্তে এই কথাগুলো বন্ধ করেন। এ কথাগুলো যারা লিখছেন তারা প্রমান দিচ্ছেন আসলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে ইনাদের অনেকের যথেষ্ট ধারনাই ছিলোনা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কবে কখন স্বাস্থ্য সম্মত-সুসংঘবদ্ধ ছিল?
এতোদিন দেশের মানুষ যে যেভাবে পেরেছে নিজের প্রাথমিক চিকিৎসা নিজে করেই বেঁচে-বর্তে ছিল। মানুষের মুখস্ত স্বাস্থ্য চিন্তা মানে জ্বর এলে নিজে নিজে সবাই প্যারাসিটামল বা নাপা এসব খেয়ে গরমে বেশি করে গোসল করেছে।
আমাশয়ের লক্ষন দেখা দিলে নিজে নিজে কিনে খেয়েছেন ফ্লাজিল। পাতলা পায়খানা হলে ওরস্যালাইন। এমন নানাকিছুতে চিকিৎসা মানে ফার্মেসিতে গিয়ে সমস্যা বললেই নানান রকমের এন্টিবায়োটিক বিক্রি করেন ফার্মেসি মালিক!
এসব আসার আগে আমাদের শৈশবে পেটের সমস্যায় তেতো ভাটি পাতার রস, কোন স্থান কেটে গেলে রিফ্যুজি লতা বেটেছেচে বের কর রস লাগাতে পারলেই মুসকিল আসান! নানান বালামুসিবতে পানি পড়ার দেবারও লোকও থাকতেন গ্রামে।
এবং ঢাকা শহরে পানি পড়া দিতেন কবি বেগম সুফিয়া কামালও! খুব বিপদ ছাড়া কেউ কি কখনো হাসপাতালে যেতেন? সরকারি হাসপাতালগুলো নানা অব্যবস্থাপনায় নিজেরাই অসুস্থ থাকতো বেশি।
বেসরকারি হাসপাতালের সেবার চাইতে গলাকাটার গল্প বেশি বলা হতো। এখন করোনা উপসর্গের ভয়ে কেউ আর কোন হাসপাতালেই ঢুকতে পারছেননা। হাসপাতাল যদি আরও বেশি রাগ করে সে ভয় ঢুকে গেছে সরকারের মনের মধ্যে!
তখন দূর্ঘটনা সহ নানান জরুরি সমস্যায় একমাত্র যাবার জায়গা ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। পুলিশ নাকি ওখানেই থাকতো বসে! করোনা এমন ভয় দেখিয়েছে না, কেউ আর কোথায় বসে থাকেনা!
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-প্রধান বিচারপতি বা সেনাবাহিনী প্রধান সবাই ভয় পান একজন করোনা পজিটিভকে! সবার মুখে মাস্ক হাতে গ্লাবস। আপাদমস্তক পিপিই না পরে সংবাদ ব্রিফিং’ও করেননা স্বনামখ্যাত বিএনপির রিজভি!
বৃক্ষমানব আবুলকে দেখতে বাংলাদেশ গেলে হাসপাতালের বারান্দা সহ সব জায়গাগুলো রোগী ভর্তি দেখেছি। হাঁটার মতো পথও ছিলোনা। এটিইতো ছিল বাংলাদেশের স্বাস্থ্য চিত্র। তখনতো কোথাও করোনা ছিলোনা।
চিকিৎসা পেতে দেশের লোকজন টাকা জমিয়ে চিকিৎসার জন্যে ট্রেনে বাসে বা বিমানে চড়ে চলে যেতেন ভারতে। হাসপাতালগুলোর আশেপাশের আবাসিক হোটেল ভর্তি থাকতো বাংলাদেশি রোগীদের আত্মীয়স্বজনে। আশেপাশে শাড়ির দোকানও থাকতো।
বাংলাদেশের লোকজনের যাতে বেশি অসুখ হয় এরজন্যে ভারতীয় চিকিৎসা-ডলার ব্যবসায়ীরা দোয়া-খায়ের করতো কিনা সেই অনুসন্ধানী রিপোর্ট কোন দেশের কোন সাংবাদিক কখনও করেনি। এনডিটিভি, একাত্তর টিভি কেউ নয়।
টাকার সামর্থ্য ভালো হলে আরেক গ্রুপ ভারতের নোংরা শহরগুলো এড়িয়ে চলে যেতেন ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর। মাউন্ট এলিজাবেথ অথবা বামরুদগ্রাদ হাসপাতালের নাম এইসব লোকজন পিজি অথবা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের চেয়ে ঢের জানেন।
একদা হাওরের সন্তান বাংলাদেশের বিবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেটও এখন চোখ দেখাতে লাটবহর সহ নিয়মিত বিলাত যান। হাওরে তিনি যখন ছিলেন নিজের টাকায় তাঁর চিকিৎসা করতে হতো।
কিন্তু রাষ্ট্রপতির খাবার-কাপড়চোপড়ের মতো চিকিৎসার খরচও দেয় রাষ্ট্র। আমার চোখ দুটিতেও গ্লুকোমার সমস্যা আছে। এখানে পাড়ার ডাক্তার দেখাই। এখানে আমার ডাক্তারকে একবার গল্পটি করেছিলাম।
চোখের এই সমস্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি লাটবহর সহ সরকারি খরচে বিলাত যান বলাতে তিনি অবাক ভাবনায় হেসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ টিকেটে দেশের হাসপাতালে চোখ দেখান এমন রিপোর্ট মিডিয়ায় হয়।
কিন্তু তাঁর চোখের অপারেশন হয়েছে বিদেশে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন দেশের সার্জনরা তাঁর চোখে হাত দিতে সাহস পান না। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে অপারেশনের জন্যে বিদেশে যেতে হয়েছে। তাঁর তখন দেশে ফিরতে দেরি হচ্ছিলো।
ব্যাস, এই চান্সে একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বিদেশে থাকা এক ইউটিউবার। ঘটনা সত্য না হওয়ায় সুবিধা করতে পারেননি। সত্য লুকোনো যায়না। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের অনেক গল্প শুনেছিলাম। এবার এর গলদ ধরা পড়লো।
তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবা পরিকল্পনার কমিউনিটি ক্লিনিক যদি সংঘবদ্ধ হতো এই সময়ে তা মানুষকে নানা সার্ভিস দিতে পারতো। অন্তত সেখানে মানুষের করোনা টেস্ট সহ নানা সেবার ব্যবস্থা করা গেলে মানুষের এতো হাহাকার শোনা যেত না।
উল্টো এগুলোর বেশিরভাগ এখন তালাবদ্ধ! যখন এই করোনা সময়ে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে বিনা চিকিৎসায় মানুষের প্রান যাচ্ছে, সেখানে গ্রামবাসী ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা চাহিয়া তাহাকে লজ্জা দিয়া লাভ কি’।
বাংলাদেশের ধনিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতারা যেহেতু দেশে চিকিৎসাই করাননা তাই তারা দেশের হাসপাতালের খবর জানতেনইনা। এগুলোর উন্নয়ন নিয়েও তারা ভাবেননি। মির্জা ফখরুলগংও চিকিৎসা করান বিদেশে।
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যখন ব্যর্থ হুলস্থুল চলছিল তখন বলা হচ্ছিল ম্যাডাম অমুক অমুক দেশের ডাক্তার দেখান, তাই তাদের কাছে যেতে চান। পারকিনসন্সের রোগী মোর্শেদ খান নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন লন্ডনে।
অতএব এই সময়ে আকাশ সীমান্ত-ফ্লাইট বন্ধ থাকায় মোর্শদ খান একখানা আস্ত এয়ারক্রাফট ভাড়া করে লন্ডন গেছেন। দরবেশ চাচার ভাই সোহেল রহমানও বিদেশে গেছেন গিয়ে নাম-বদনাম কামিয়েছেন একই পন্থায়!
টাকা আর চিকিৎসার সংকট শুধু দেশের গরিব লোকজনের। দোষের শেষ নেই গরিব জন্ম আর জীবনের। সে হজে যেতে পারেনা। উচ্চ মার্গীয় দোয়া খায়ের করাতে না পারার ব্যর্থতায় তার হুরপ্রাপ্তির কোন গ্যারান্টিও নেই।
কাজেই দেশের গরিবদের চিরায়ত চিকিৎসার কথা বলে বানানো ভবনের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই ভেঙ্গে পড়েছে, এসব বলে বলে আহাজারি কান্নার কেঁদে কেঁদে রিপোর্ট করা মশকরা ছাড়া আর কী!
চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেতো ভাঙ্গবে। এমনকি বামপন্থী নেতাকর্মীদেরও নিজেদের মতো করে এক ধরনের চিকিৎসার নিশ্চয়তা থাকতো। নিজেদের সংগঠনের সদস্য বা পরিচিত ডাক্তার তারা দেখাতে পারতেন।
সে কারনে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ঘটির খবর সেভাবে জোনায়েদ সাকীরাও সেভাবে জানতেননা। সাংবাদিক শুনলেই স্বজনপ্রীতিমন্ডিত আলাদা ভালোবাসা দিয়েছেন অনেক ডাক্তার-হাসপাতাল। তেমন ভালোবাসা ভাগ্যবানরা ভাবতেন আহা সফল পেশা জীবন!
তেমন ভালোবাসার ঘেরাটোপের ভেতর বসে দেখা যেতোনা গরিবের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কংকাল। কাজেই যারা এতদিন নুন খেয়েছেন অথবা নুন খাওয়াদের ভাই-বোন তারা এখন এই নেই সেই নেই বলে বিরক্তিকর চিল্লাচিল্লি বন্ধ করুন প্লিজ।
এখন অমুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তমুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসব থামান। যেখানে যতোটা ব্যবস্থা অথবা সুযোগ আছে সে সবই এখন আমাদের সম্বল। এসবের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারন দিন শেষে ডাক্তার, হাসপাতালই চিকিৎসা দেবে।
এখন পিঠে হাত বুলিয়ে কাজ আদায়ের সময়। যারা জানপ্রান দিয়ে কাজ করছেন তাদের প্রশংসা করে যেতে হবে। তাতে কাজ আরও ভালো পাওয়া যাবে। প্রশংসা মানুষের মানসিক শক্তি বাড়ায়।
এবারও বাজেট নিয়ে বিজ্ঞ মতামত দেবার চিরায়ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে! সামর্থ্যবান দেশের বাজেটের বড় উৎস কর ব্যবস্থা। বাংলাদেশের এই উৎসটা দূর্বল। ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে কর দেন খুব কম মানুষ।
সরকার নানা খরচ চালাতে ব্যাংক থেকে ঋন নেয়। এবার শুধু সঞ্চয়পত্র থেকেই কুড়ি হাজার কোটি টাকা নেবার পরিকল্পনা! বাজেটে অর্থ যোগানের অভ্যন্তরীন উৎস আমাদের বাড়াতে হবে। বন্ধ করতে হবে মুখস্ত স্ববিরোধী কথাবার্তা।
বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা বহাল রাখা মানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া। কথা ঠিক বলেছেন জনাব চৌধুরী। সেই যে আপনার নেত্রী খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছিলেন সেই দুর্নীতি থেকে আজও আমরা বেরুতে পারছিনা!
মানুষকে খুশি দেখাতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যা দেখানো হয়েছে এ টাকা আসবে কোত্থেকে? কভিড মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী নানা প্রনোদনা ঘোষনা করছিলেন। টাকার সমস্যায় আমরা অনেক কিছু কন্টিনিউ করতে পারিনি।
লোকজনকেও ঘরে রাখতে পারিনি আমরা। টাকার ব্যবস্থা থাকলে লোকজনকে ঘরে ধরে রাখতে পারলে আমাদের সংক্রমন কম হতো। এখন সংক্রমন যে হারে বাড়ছে এর পিছনে যে খরচ হচ্ছে তাতে প্রনোদনার সবকিছু পন্ড হবার জোগাড়।
করোনা যুদ্ধের জন্যে যে ব্যয় ধরা হয়েছে এটা কোন টাকাই না। আরও বেশি টাকার ব্যবস্থার জন্যে প্রবাসীদেরও কাজে লাগান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে টাকা পৌঁছাতে পারলে তাঁর সাহস আরও বাড়বে।