আমাদের কোয়ারেন্টাইন – ডে – ১১

“দেখ রে চেয়ে নামল বুঝি ঝড়,
ঘাটের পথে বাঁশের শাখা ঐ করে ধড়ফড়।
আকাশতলে বজ্রপাণির ডঙ্কা উঠল বাজি,
শীঘ্র তরী বেয়ে চল্‌ রে মাঝি।
ঢেউয়ের গায়ে ঢেউগুলো সব গড়ায় ফুলে ফুলে,
পুবের চরে কাশের মাথা উঠছে দুলে দুলে।
ঈশান কোণে উড়তি বালি আকাশখানা ছেয়ে
হু হু করে আসছে ছুটে ধেয়ে।”

রবীন্দ্রনাথের ঝড় কবিতাটা খুব মনে পড়লো আজ, চারদিকে শুধু আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের খবর, তার উপরে করোনার আপদ তো আছেন । যদিও দশ তলায় বসে আছি, কিন্তু আমার সকল দু:শ্চিন্তা কেবল তো যারা কাদা মাটির মানুষ তাদের নিয়ে । কি হবে ? একটা বিপদ না যেতেই আর একটা বিপদের বেণু বাজা শুরু হলো । তারপরেও হাজার টা আপদ বিপদ মাথায় নিয়েই চলতে হবে “জীবন বাই সাইকেল চালানোর মত একটা ব্যাপার, পড়ে যেতে না চাইলে তোমাকে সামনে চলতে হবে” আইনস্টাইন কাকুর কথা, আমার না । আমি শুধু ভাবি আর চলতে চেষ্টা করি ।

পুরোদিন আম্পান সংবাদের সাথে ছিলাম । ইন্ডিয়ার অনেক বন্ধুর পোষ্ট থেকে আম্পানের তান্ডব দেখলাম, বাপ রে, কি ভয়ঙ্কর ! আর মাত্র তিনটে দিন বাকী রইলো … আমাদের ঘরে ফেরবার । বেশ একটা উড়বার সুখে ডানা রোদে দিয়েছি । সন্ধ্যায় বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির একটা ফোটাও জানালায় এসে পড়লো না কেন, সেই নিয়ে ভাবলাম কতকক্ষণ, তারপর কালো ফিতের মতো রাস্তার উপরে বৃষ্টির পানি গুলো রাস্তার আলোতে একা কাব্যিক রূপে দেখতে পেলাম যেন, মনে হচ্ছে রুপালি সাপ কেমন হলে দুলে যাচ্ছে । বেশ মন ভরে দেখলাম । আমি বৃষ্টি পছন্দ করি না, খুব অল্প সময়ের জন্য যে বৃষ্টি ঝরঝর করে আসবে, আবার চলেও যাবে, এমন বৃষ্টি ভালো লাগে । যে বৃষ্টি দিনের পর দিন কেমন কেঁদেই যায় ছিঁচ কাঁদুনের মতো, তেমন বৃষ্টি আমার দুই চোখের বিষ । অসুস্থ হয়ে যাই । এমন দিন গুলোতে আমার হুট করে মুড সুইং হয়ে যায় । থমথমে একটা ছায়া গ্রাস করে । তবে কয়েক দিন ধরে মুড সুইংহচ্ছে খুব । হতে পারে বৃষ্টি ছাড়াই, বন্ধ ঘরে, থেকে থেকে । কিছুই ভালো লাগছে না, মেজাজটা বিগরে আছে, আর কথায় কথায় ঝারি খাচ্ছে বাচচারা সবাই । গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি, নেটফ্লিক্স এ মানি হেইস সিরিজ টা সেকেন্ড টাইম দেখতে শুরু করছিলাম । দেখা জিনিস তবুও । ভালো লাগে … তাই ! ভালো লাগার উপর তো কিছু করার থাকে না ।

দেখতে দেখতে রাত সাবার ! যখন ঘুমোতে গেলাম তখন সকাল সাতটা … ঘুমিয়ে পড়িলাম

এমন সময় দরজায় টোকা … ভেঙ্গে গেল আমার সিরিজ দেখে ডেকে আনা  ঘুম … বাইরে গিয়ে দেখি পিপি পরে জনা কতক নার্স … কোভিড -১৯ নমুনা নিতে এসেছে সেকেন্ড টাইম ।

যেতেযেতে দেখে দিবে আমরা কোভিড নেগেটিভ হয়েই যেন আপন স্টেটে যেতে পারি ।

এরপর শুরু হবে হোম কোয়ারেন্টাইন । কোয়ারেন্টাইনে জীবন বাজি রাখছি এবার …!

টেষ্টের নমুনা নিয়ে যাওয়া মানে, আমার চিন্তার মিটার অন করে রেখে যাওয়া, আর কি !

যে কোন টেষ্ট করার কথা হলেই আমি কেমন নেতিয়ে যাই । কি জানি কি হয় ! এই গানই বাজবে যতক্ষণ না রেজাল্ট দেয় ।

ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন ।

শুভকামনা সতত সবার জন্য ।