খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজ – ৫০ বছর পুর্তি এবং সূবর্ণ জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে কিছু কথা

পেছনে ফিরে তাকালে স্কুল জীবনের কোনো শিক্ষকের চেহারা নিশ্চয়ই স্মৃতিতে ভেসে উঠবে, যিনি পরবর্তী পথ চলায় আপনার উপর বড় প্রভাব রেখেছেন৷ যিনি শিক্ষার্থীদের জীবন আমূল বদলে দিচ্ছেন৷ আর মানুষ গড়ার কারখানা হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। বাবা মা সন্তান-সন্ততি জন্ম দিতে পারেন, লালন পালন করতে পারেন। নিজের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারেন। কিন্তু একজন শিক্ষক বাবা ও মায়ের সেই সন্তানকে গড়ে তোলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি মানুষ গড়বার কারখানা হয়ে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে শিক্ষকরা সেই কারখানার কারিগর।

একজন কুমার যখন সারাদিন কাদা মাটি ছেনেছিটকে-পাতিল, কুলা- চালুন তৈরী করতে পারেন, শিক্ষকরাও তেমন। জমিতে চাষ করে পরিপূর্ণভাবে যত্ন করেও বছর শেষে ফসলে কিছু চিটা থেকেই যায়। অনেক নাম না জানা আগাছাও থাকে সেখানে। ঠিক তেমননিভাবে এই মানুষ গড়বার কারখানাগুলোর কারিগরদের ব্যাপারটাও এরকম।

প্রতিটি ছাত্রের কাছে একজন শিক্ষক হলেন আয়নার মতো। তবে সব শিক্ষকই আবার সচরাচর আয়নার মতো নয়। শিক্ষকরা হলেন এমন এক আয়না যার সামনে দাঁড়ালে কেউ দেখেন অদূর ভবিষ্যতের ভাগ্যাকাশে জ্বলতে থাকা কোনো উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। আবার সেই একই আয়নার সামনে দাঁড়ালে কেউবা দেখেন অন্ধকার বিভীষিকাময় ভবিষ্যত। একজন শিক্ষকের মাঝে যে ছাত্ররা তাদের ভবিষ্যতের উজ্জল নক্ষত্রকে দেখতে পায় তারাই জীবনে জেগে উঠে বিজলির মতো। আর যারা সেটা দেখতে ব্যর্থ হয়, তারা ঝরা ফুলের মতো ঝরে পড়ে নিরবে নিঃশব্দে।

গাছের তলায় পড়ে থেকে শুকিয়ে মিশে যায় মাটির সঙ্গে। একজন ছাত্রকে যেমন তার শিক্ষকের মাঝে খুঁজে নিতে হবে ভবিষ্যৎ পথ চলার দিকনির্দেশনা ঠিক তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষকের আদর্শটা হতে হবে তিনি শিক্ষার্থীদের কতটা সহজভাবে আয়না হয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখাতে পারলেন। একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো, শিক্ষার্থীদের ভেতর জগৎটা অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখার সক্ষমতা। অর্থাৎ ছাত্রদের মনের কথা বোঝার ক্ষমতা। ছাত্রদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে মূল্যয়নে আনার সক্ষমতা। একজন শিক্ষক হবেন উদার চেতা, কোমলমতি, মিষ্টভাষি। যার কথা শুনলে ছাত্ররা হবে তুষ্ট। মনের ভেতর জ্বলে উঠবে উৎসাহ অনুপ্রেরণার বাতি। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছে স্কুলের সকল ছাত্রই নিজের সন্তানের মতো। বাবা-মায়ের কাছে যেমন সকল সন্তানই সমান, ঠিক একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছেও তেমনটাই। বাবা মা যেমন করে সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে আদর সোহাগে জড়িয়ে নেন কোলে। অন্যায় পেলে শাসন করেন। আবার সন্তানের অভিমান ধুলোয় মিশিয়ে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

আদর্শ শিক্ষকও এর ব্যাতিক্রম নন। একজন আদর্শ শিক্ষককে ছাত্রদের সঙ্গে অবশ্যই বন্ধুত্বভাবাপন্ন হতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকতে হবে তাঁর সম্পর্ক। আনন্দের মধ্যে পাঠদান করতে পারলে সেটা ছাত্রদের আমলে নিতে খুব সহজ হয়। আনন্দের মধ্যে কখন যে কত কি শিখে ফেলে বুঝতেই পারে না শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় আদর্শ শিক্ষকের বরই অভাব। চোখ মেললেই নজরে পড়ে অনেক শিক্ষক। কিন্তু তাদের মধ্যে আদর্শ শিক্ষক কয়জন? স্কুল, কলেজে- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কতজনের শিক্ষকের সান্নিধ্য মিলেছে, আর শিক্ষকদেরই বা তাদের কতজনের কথা মনে থাকে? সব শিক্ষকই কি স্থান করে নিতে পেরেছেন শিক্ষার্থীদের মনে? অবশ্যই তা পারেননি। শিক্ষকের মনে স্থান করে নিতে একজন শিক্ষার্থীর যেমন ক্লাসের সেরা মেধাবী, নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও সচ্চরিত্রের অধিকারি হতে হয়। অপরদিকে ঠিক একজন শিক্ষককে তার ছাত্রদের মনে স্থান করে নিতে হতে হয় উত্তম চরিত্র ও সুমিষ্টভাষী, বন্ধুসুলভ এবং সহজে আপন করে নেওয়ার মতো গুণের অধিকারি। তবেই না সেই গুণাবলি মনে রাখে শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় কেউই মনে রাখে না, আর রাখবেই বা কেন?