ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা হঠাৎ করে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। করোনাকে কেন্দ্র করে সব দেশের এমন সফর এখন বন্ধ আছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবও পাঁচ মাস পর বিদেশ সফরে বেরুলেন।
সেখানে প্রথম দেশটিই বাংলাদেশ। এভাবে প্রথম দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে নির্বাচন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গুরুত্বও স্বীকার করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে ঢাকায় একদিন বেশি ছিলেন তাদের পররাষ্ট্রসচিব।
হর্ষ বর্ধন এক সময় বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। তখনও তিনি এখানে বেশ সক্রিয় ছিলেন। এখান থেকে যাবার অল্প সময়ের মধ্যে তাকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব করা হয়। এরজন্য ঢাকাকে তাঁর জন্যে পয়মন্ত স্পট ভাবতেই পাড়েন হর্ষ।
এতে করেও হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার যোগ্যতা-দক্ষতা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে ভারতের গুরুত্বকে ইঙ্গিত করে। তাঁর সফর নিয়ে নানান মজার মজার কথা লেখা বলা হচ্ছে। এর অবশ্য কিছু পিছনের কারনও আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে লেখা হচ্ছিল, দুই দেশের সম্পর্ক ভালো নয়। এটা ভালো নয় দু’দেশের জন্যে। এই অবস্থায় হর্ষ এসেছেন দেখে খুশি খুশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমিন বলেছেন, তাঁর সফর বাংলাদেশের জন্যে খুব খুশির খবর।
ভারতীয় একজন সচিবের সফরেই এত খুশি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী! তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর হলে কী বলতেন! পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সোজা সরল মানুষ। রাজনীতিবিদদের মতো প্যাচের কথা জানেননা। তাঁর কথায় প্যাচ ধরতে নেই।
যথা নিয়মে বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান যা বলেছেন এর সারসংক্ষেপ দাঁড়ায়, ভারতীয় সচিবের সফরকে কেন্দ্র করে তাদের ভারত বিরোধী মনের ভিতর ‘কুচুরকুচুর করছে’! নজরুল বলেছেন, ‘গোপন কথা’ বলতে হবে প্রকাশ্যে!
‘সফরে কী আলোচনা হলো, কী চুক্তি হলো তা দেশের মানুষের সামনে প্রকাশ করতে হবে’। বিএনপি আমলের পররাষ্ট্রসচিব শমসের মোবিন চৌধুরীও একই কথা বলেছেন। আমিও বলি, সব কথা প্রকাশ্য হলে ভালো। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
কিন্তু বাস্তব হলো বাংলাদেশের মতো দেশের সবকথা বলা হয়না বা বলা যায়না প্রকাশ্যে। সংসদেও সবকিছু নিয়ে স্বাধীন সম্মানজনক আলোচনা হয়না। এটা বিএনপি আমলেও হয়েছে। এখনও হচ্ছে। যা মোটেই ভালো কোন দৃষ্টান্ত নয়।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা নজরুল ইসলাম খান কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন বিএনপি আমলে। তাঁর কুয়েত চাকরি জীবনে দূতাবাসের নানান কার্যক্রমে দুর্নীতির অভিযোগে তখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে একদিন দূতাবাসে হামলা চালায়।
এটাই ছিল বিদেশে বাংলাদেশের কোন দূতাবাসে এ রকম হামলার প্রথম ঘটনা। এতে খুব বাজে একটা নজির সৃষ্টি হয়। আমি তখন ঢাকা থেকে নজরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওই ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করতাম।
খুব স্বাভাবিক দুর্নীতির কথা তিনি তখন বেমালুম চেপে যেতেন। স্বীকার করতেননা। তখন আরেকটি বাজে কাজ করেন বিএনপির এই নেতা! ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তখন তিনি কুয়েতের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে সেদেশ থেকে বহিষ্কার করিয়েছিলেন।
তখন কূটনৈতিক দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম খান আমাকে একটা কথা ফোনে প্রায় বলতেন, তাহলো সবকথা মিডিয়ায় বলা যায়না। আমাদের সব নেতারাই এমন সব সময় একই কথা ক্ষমতায় থাকতে এক রকম ক্ষমতার বাইরে আরেক রকম করে বলেন।
এরজন্য দেশের কোন কিছুতেই কোন ধারাবাহিকতা নেই। ‘দিনে দিনে তাই বাড়িয়াছে দেনা’! ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কটাও অদ্ভূত কিসিমের। এই সম্পর্ক নিয়েও রাজনীতিকরা ক্ষমতায় থাকতে এক রকম ক্ষমতার বাইরে গেলে বলেন আরেক কথা!
ভারত দেশটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হৃদয় উজাড় করে সহায়তা দিয়েছে। এরজন্য আর দশটা দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আর ভারতের সম্পর্ক এক নয়। তখন আমাদের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে খাইয়েছে পরিয়েছে।
এরজন্য তখন শরণার্থী ট্যাক্স দিতে হয়েছে ভারতের সাধারন মানুষজনকে। বাংলাদেশের জন্যে বাসে-ট্রেনে উঠলেই শরণার্থী ট্যাক্স, কিছু কিনতে গেলে সিনেমা দেখতে গেলে শরণার্থী ট্যাক্স গুনতে হয়েছে সব ভারতীয়কে।
কারন ভারত সরকারের আর্থিক সামর্থ্য তখন আজকের মতো হৃষ্টপুষ্ট ছিলোনা। আর ভারত যদি তখন বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে এভাবে না দাঁড়াতো, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন-অস্ত্র না দিতো তাহলে, এভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হতোনা।
আমরা হয়তো এখনও গাইতেই থাকতাম, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ—! কিন্তু এরপরও নানাকারনে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ এখনও মনের দিক থেকে ভারত বিরোধী। বৃটিশরা যখন ভারত ভাগ করে দিয়ে যায় তখন তারাও এটি চেয়েছে।
এটা স্মরণ করলে বলতে হয় ভারত ভাগের ব্রিটিশ লক্ষ্য এ অঞ্চলে সফল শতভাগ! দেশভাগের পর ভারত থেকে আসা মুসলমানদের সিংহভাগ সব সময়ই ভারত বিরোধী। এদের সিংহভাগ বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে এসে বাড়িঘর করে থিতু হয়।
এরজন্যে ভোটের সময় দেখবেন ওই এলাকাগুলো বরাবর আওয়ামী লীগ বিরোধী! এদের কাছে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা মানে ভারত বিরোধিতা করা। আজকের ভারতের কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতন, বাবরি মসজিদ ইস্যু, বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকান্ড, এসব বিষয়ও বরাবর ভারত বিরোধিতার সলতেতে আগুন দেয়।
একই কারনে বাংলাদেশের সিংহভাগ মুসলিম বাসিন্দাও হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী। এরা এই দুই নামে দেখে ভারতের ছায়া! এমন কি এখন ফেসবুক প্রোফাইলের টাইমলাইনে বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার ছবিওয়ালাও এমন আছে বিস্তর।
এখনও বাংলাদেশের মুসলিম বন্ধুও তার হিন্দু বন্ধুকে ভালোবাসে। পুজা-পার্বনে তাদের বাড়ি যায়। কিন্তু এদের বেশিরভাগ সুযোগ পেলেই আড়ালে অথবা প্রকাশ্যে অথবা মজা করে তাদের উদ্দেশে ‘মালাউন’, ‘মালু’, ‘ডেডা’ এসব গালিও ব্যবহার করে।
হিন্দু বন্ধুদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেও মন থেকে তাদের মুসলিম বন্ধুকে বিশ্বাস করেনা। এটিও মাইনরিটি সাইকোলজির এক ধরনের অনিবার্য অংশ হয়ে গেছে। সংখ্যাগুরু সাইকোলজিও ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তানে এক। সংখ্যালঘুকে অচ্ছুৎ ভাবে।
বাংলাদেশে সাধারন একটি ধারনা আছে হিন্দু মানেই আওয়ামী লীগের সমর্থক। নৌকার ভোটার। এরজন্যে যখন যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যায় এরসঙ্গে হিন্দু সম্পত্তিতে হামলা-আগুন দেয়ার ইতিহাস জড়িত।
সেখানে আছে পূর্নিমাদের কান্না-গাঁথা। কিন্তু বাস্তবে এখন আর নতুন প্রজন্মের হিন্দু ছেলেমেয়ে মানেই চোখ বন্ধ করে আওয়ামী লীগার নয়। হিন্দু ও সংখ্যালঘু বান্ধব নয় আজকের সময়ের আওয়ামী লীগ সব নেতাকর্মীও।
এরা তখন তাদের কাউকে আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় দেখলে তাদেরকে হিন্দু রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে তাদের আক্রমন-মারধর করে। যেমন তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহনের কোন অধিকার নেই। মানুষের ভালোবাসা চাইলে তাদের মর্যাদা দিতে হবে আগে।
বলা হয় বাংলাদেশের বেশিরভাগ হিন্দু সম্পত্তির দখলদার আওয়ামী লীগার নেতাকর্মী। এটি সর্বশেষ দেখা গেছে ফরিদপুরে। সেখানকার খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে যার কখনও কথা হয়েছে সে শুধু জানে তার মুখের ভাষা কতোটা অশালীন এবং ঔদ্ধত্যপূর্ন।
এবং তিনি কট্টর হিন্দু বিদ্বেষীও। ফরিদপুরে হিন্দু সম্পত্তি দখল- তার বিরোধীদের নির্যাতনে তিনি স্থানীয় কিছু হিন্দু নেতাকে ব্যবহার করেন। খন্দকার মোশাররফ কোন দিন গ্রেফতার হলে এ নিয়ে জিম্মি জনগনের মুখ খোলার হিড়িক পড়বে।
বাংলাদেশের হিন্দু ও ভারত বিরোধিতার বিষয়টির ঠিক উল্টো এক চিত্র বাংলাদেশিদের পাসপোর্টে ভারত সফরের তথ্যে। আজমির জিয়ারত, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিয়ের বাজার, কলকাতায় বিয়ার খাওয়া এমন নানা ইস্যুতে বাংলাদেশিরা ভারত যায়।
ভারতের সঙ্গে চলাচলকারী বাস-ট্রেন-বিমানের প্রায় সব যাত্রীই বাংলাদেশি। কলকাতার কিছু এলাকায় গেলে রাস্তার চালচিত্রে বাংলাদেশ মনে হবে! অস্ট্রেলিয়ায় যে বাংলাদেশি ছাত্ররা পড়াশুনা করতে আসে তাদের সিংহভাগ কাজ করে নিজের টাকায় পড়ে।
আর ভারতে যারা পড়তে যায় ভারত সরকারের বৃত্তির টাকায় যারা পড়ে তাদের বাইরের সবাই পড়ে বাপের টাকায়। ভারতের দার্জিলিং, নৈনিতাল সহ নানা এলাকার বোর্ডিং স্কুলগুলোতে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীই বেশি।
এর কারনে বলা হয়, বাংলাদেশিরা কোন কারনে প্রতিবাদ হিসাবে ভারত যাওয়া বন্ধ করলে সে দেশের অনেক ব্যবসা বানিজ্য বসে পড়বে। কারন নানা ইস্যুতে পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরা আসলে বছরে কত হাজার কোটি ডলার নিয়ে যায় এর প্রকৃত হিসাবে নেই।
কারন বাংলাদেশের এর পুরো কারবারটাই এখন দুর্নীতিগ্রস্ত। সীমান্তের ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টগুলোতে তাই গায়ে হাত দিয়ে পকেট পরীক্ষা-লেনদেনের ঘটনা ঘটে। আর এখন এমন অনেকেরই ক্রেডিট-ভিসা ডেভিড কার্ড আছে।
যারা এভাবে ভারতে বেশি যায় তাদের বেশিরভাগও কথাবার্তায় ভারত বিরোধী। এখনকার ভারতীয়দের নানা বক্তব্য-তৎপরতায়ও বাংলাদেশের ভারত বিরোধিতাকে ইন্দন দেয়। এরা বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের ইতিহাসও জানেনা।
এরজন্যে আমি বলি নরেন্দ্র মোদী একাত্তরে ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশিরা সেখানে আশ্রয় পেতোনা। এক সময়ের ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে হিন্দু জাগরন ঘটায় এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশেও এক ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত মুসলিম জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে।
এরা পোশাকে-কথায় বেশি মুসলিম। কিন্তু তাদের জীবনযাপন দুর্নীতিগ্রস্ত। আবার পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বা ভারত কেউ রামকৃষ্ণ মিশন নয়। সম্পর্ক ঠিক করে অর্থনীতি। ব্যক্তি-সমাজ বা রাষ্ট্র-রাষ্ট্র’র সম্পর্কও অর্থনৈতিক শক্তি ঠিক করে দেয়।
বাংলাদেশের নানাকিছুতে এখন সামর্থ্য-অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে। বিপুল জনসংখ্যার দেশ হিসাবে বাজার হিসাবেও বাংলাদেশ এখন আকর্ষনীয়। এটা ভারতের কাছে যেমন, তেমনই আকর্ষনীয় চীন সহ অন্যসব দেশের ক্ষেত্রেও।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নানাকিছুতে কাউকে ছেড়ে কথা বলেননা। এটা ভারত হলেও নয়। বাংলাদেশে বরাবর দূর্বল চিত্তের লোকজন ক্ষমতায় থাকে বলে তাদের কাছে ঢাকার মার্কিন চরিত্র একটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্র হয়!
কিন্তু দেখা গেছে সবকিছুতে নাক গলানোর মনোভাব দেখলে শেখ হাসিনা ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও সহজে সাক্ষাৎ দেননা। এরকারনে এখন দেশের খুব কম মানুষ ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা ব্রিটিশ হাইকমিশনার এদের নাম জানেন।
এটি সর্বশেষ ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশার রিভা গাঙ্গুলির ক্ষেত্রেও ঘটেছে। বিষয়টি অবাক করেছে কোন কোন ভারতীয় মিডিয়ার কাছে। বড় দেশের মিডিয়ার লোক হিসাবে তাদের কারও কারও নিজেদের মোড়ল মোড়ল ভাব করার বাতিকও আছে।
সাম্প্রতিকালে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি সর্বশেষ সাউদার্ন চায়না এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দেশে যাই। মাঝের ট্রানজিট ছিল গুয়াঞ্জো এয়ারপোর্টে। প্রথমবারের মতো সেই এয়ারলাইন্সে ভ্রমনের অভিজ্ঞতাও মন্দ ছিলোনা।
দেশ থেকে ফেরার পথে এয়ারক্রাফটের ভিতর গুয়াঞ্জোগামী বাংলাদেশি এত যাত্রী দেখে চমকে উঠি। মানে এত লোকজন ব্যবসা-পড়াশুনা সহ নানা কাজে এখন চীন ভ্রমন করেন! সহযাত্রীর সঙ্গে কথা বলেও তেমন একটি ধারনা পেয়েছি।
চীনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ভারতের সম্পর্ক এখন ভালোনা। এরমাঝে চীনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক উন্নয়ন ভালো চোখে দেখছেননা অনেকে। ভারতীয় নাগরিকত্ব বিলকে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
এতে ভারতীয় অনেকে অবাক-আহত হয়েছেন। এসব তাদের বোঝার ভুল। ‘সবকিছুতে হ্যাঁ বলিবো’ এই প্রধানমন্ত্রী তা নন। এ নিয়ে অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চারও মিলিয়েছেন। ভারতীয় কিছু অখ্যাত অনলাইন বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে,
প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আইএসআইর এজেন্ট বলে আজগুবি কিছু রিপোর্ট লিখে ছড়িয়ে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সংকোচনের বানীও দিয়েছেন!
এসব বিষয় দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে অনেকের মনে কানাকানির সৃষ্টি করে। হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সফর নিয়েও তাই অনেকের আগ্রহ তিনি কী ‘ওরে আজ তোরা যাসনে কোলের বাইরে’ বলতে এসেছেন?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আমি অন্যভাবে দেখি। সময়ে সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে নানাকিছু ঘটবে। কিন্তু এ সম্পর্ক কোন কালেই ভারতের চেয়ে সম্পর্ক চীনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ হবেনা। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কোন সীমান্তও নেই।
পূর্ব পাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আরেক দেশ ভারত থাকায় পাকিস্তান নামের এক দেশ টিকলোনা! আর মাঝে ভারতকে রেখে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ভারতে বাদ দিয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে যাবে! বাংলাদেশ-ভারতের সাংস্কৃতিক বন্ধনের কারনেও এটি সম্ভব নয়।
ভারতীয় মিডিয়া-হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাগং’ও বুঝুন সম্পর্ক ভালো থাকবে পারষ্পরিক আস্থা-শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। মর্যাদার জায়গাটি বাংলাদেশ অর্জন করেছে। এটি কেউ ভুলে গেলে ক্ষতিটা তাদেরই হবে। আর করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গ!
এতে ভারত বা কারও সার্টিফিকেট দেবার কেউ নয়। এটির টাকার বিষয়। যে টাকা দেবে সে ভ্যাকসিন পাবে। বাংলাদেশ যদি নিজের লোকজনকে খরচাপাতি দিয়ে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টা করতো সেটা ভালো লাগতো। বাংলাদেশের সে প্রতিভা আছে।