প্রিয় বাংলাদেশ-জন্মভূমি, এই বহুদূর দেশ থেকে, প্রশান্ত মহাসাগরপাড়ের শীতের শহরে বসে আমি সারাক্ষন করোনাক্রান্ত তোমার কথা ভাবি আর কাঁদি। কারন এখন দূঃখের সময় আমাদের পৃথিবীর।
এখানে সিডনিতে আমার ঘরের টিভিতে কম্পিউটারে সারাক্ষন চলে বাংলাদেশের নিউজ চ্যানেল। অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোয় উদ্বেগ চোখ। আমাদের প্রিয় নাসিম ভাইর জ্ঞান এখনও ফেরেনি।
তাঁর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। করোনা আক্রান্ত প্রিয় নাসিম ভাইর যে স্ট্রোকও করেছিল। এরপর তাঁর মাথায় দরকারি অস্ত্রোপচারও করা হয়েছে। এখন এসব অস্ত্রোপচারের পর জনপ্রিয় মানুষদের চিকিৎসা তথ্য জানাতে নিয়মিত ব্রিফিং হয়।
তাদের জন্য প্রার্থনারত ভক্তদের শান্ত রাখতে আশ্বস্ত করতে সার্জারির ডাক্তারদেরও আজকাল জানতে শিখতে বলতে হয় নানান শব্দচয়ন! যেমন বরিস জনসন বলেছেন তাঁর মৃত্যু ঘোষনার ভাষাও লিখে রেখেছিলেন ডাক্তাররা!
করোনায় বাংলাদেশের বিকার ভাবলেষহীন মানুষের ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে যে সব টিভি সাংবাদিক পিটিসি দেবার সময় সারাক্ষন বলেন ভেন্টিলেটর সংকট সমগ্র! একেক হাসপাতাল অথবা শহরে কত সহস্র রোগীর বিপরীতে কয়টা ভেন্টিলেটর!
এর যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগের হিসাব বলে বলে নিত্য করেন বোকা হাপ্যিতাস! তখন মনে হয় করোনা পজিটিভি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের চিকিৎসা পদ্ধতির রিপোর্টগুলোই তারা ভালো করে দেখেননি।
সেখানে ব্রিটিশ ডাক্তাররা ঘন্টা হিসাব মেপে অসাড় প্রধানমন্ত্রীকে অক্সিজেন দিয়েছেন বারবার। কিন্তু ভুলেও তাঁকে ভেন্টিলেটরে নেননি। কারন অভিজ্ঞতায় তারা এরমাঝে ঢের শিখে ফেলেছেন ভেন্টিলেটরে নিয়ে গেলে খুব কম বাঁচেন করোনা রোগী।
কারন এটি এমন এক বেয়াড়া বেয়াদব মহামারী যে কে প্রধানমন্ত্রী কে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর কিছুই এটি মানেনা। পরোয়া করেনা। ছেড়ে কথা বলেনা কাউকে। প্রিয় নাসিম ভাইকে নিয়ে শনিবার সতর্ক চিকিৎসকরা তাই কোন ব্রিফিং করেননি।
কারন তাঁর যে জ্ঞান ফেরেনি। অস্ত্রোপচারের রোগীর বড় অগ্রগতির নাম জ্ঞান ফেরা। চিকিৎসকদের আহবানে সাড়া দেয়া। কিন্তু এখনওতো কিছুই জানাচ্ছেননা আমাদের প্রিয় নাসিম ভাই।
যিনি নিজে ব্রিফিং এর জন্যে বিখ্যাত ছিলেন। যে কোন ক্রান্তিকালে করতে পারতেন সাবলীল সব ব্রিফিং। আর আমরা তাঁর মুগ্ধ জনেরা একান্ত আলোচনায় প্রায় বলতাম আওয়ামী লীগ কেনো যে এই মানুষটাকে দলের সাধারন সম্পাদক করে না।
তাঁকে সাধারন সম্পাদক করলেতো দলের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক ভালো হয়। কাজ অর্ধেক অগ্রিম এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগের আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার।
যেখানে গোটা বিশ্বের সবকিছু সাজানো হয় মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে। হোয়াইট হাউসেও মিডিয়া ব্রিফিং হয় নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়ায় কখনও কোথাও রাজনৈতিক জনসভা-মিছিল হয়না।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে সরকারি অথবা দলীয় মতামত তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী-বিরোধীদলের নেতা সোজা চলে যান ক্যানবেরার ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে। আর বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাব মানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভক্ত টেবিল!
সেখানে অমুক আওয়ামী লীগের সাংবাদিক অমুক বিএনপির সাংবাদিক! সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো ভূর্তকির কমপয়সায় ডালপুরি খাওয়া! জনপ্রিয় মিডিয়া সরকার বিরোধী জ্ঞানে তাদের উদ্দেশে শক্তিশালী করা হয় ৫৭ ধারা!
শনিবার ৬ জুন অপেক্ষার সারাদিন কেটেছে সিডনিতেও। আমাদের প্রিয় নাসিম ভাইর সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কী। এটা জানাতে ব্রিফিং করেননি তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত ‘বুদ্ধিমান চিকিৎকবৃন্দ’।
পচাত্তরের জেলহত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন(অবঃ) মনসুর আলীর জনপ্রিয় প্রজন্মের অবস্থা সংকটাপন্ন। এ কথা জানিয়েছেন নাসিম ভাইর ছেলে সাবেক এমপি তানভির শাকিল জয়।
চিকিৎসকরা তাঁকে বলেছেন মোট বাহাত্তর ঘন্টা অর্থাৎ রবিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরমাঝে যদি তিনি সাড়া দেন। সাড়া দিন যদি। কাঁদো বাংলাদেশ। হাত তোলো সবাই। আর কাঁদো চিৎকার করে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের জমাট রক্তের পুরোটা অপসারন করা যায়নি শুক্রবার অস্ত্রোপচারের সময়। এরমানে দাঁড়ায় জ্ঞান ফিরলে তাঁর পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হবে। করা হবে সিটি স্ক্যান।
এভাবে অসহায় অপেক্ষার আরও বাহাত্তর ঘন্টা। এই সময়টাও তাঁর জন্য আমাদের কাঁদবার সময়। এই করোনা সময়ের তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিনিধিত্ব করতে শনিবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এম আব্দুল্লাহ। দশ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাঁর পরামর্শে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর খোঁজ রাখছেন সর্বক্ষন। হার্ড নিউজ, আমাদের প্রিয় নাসিম ভাইকে এখন আইসিইউতে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটরে। তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। অবস্থা সংকটপন্ন। এরমানে এক রকম তাঁকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
এরপর যে কথাগুলো বরাবর বলা হয় তা মিথ্যে হোক। এই দূরের সিডনি শহরে বসেও আমি আপনার জন্যে কাঁদছি প্রার্থনা করছি প্রিয় নাসিম ভাই। প্লিজ চোখ খুলুন একবার। সাড়া দিন। প্লিজ।
ঢাকায় প্রিয়জন যাদের সঙ্গে কথা বলতে যাই তারাই কেঁদে ফেলেন। প্রিয় অজাতশত্রু সাংবাদিক উত্তম চক্রবর্তী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে আনতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম। সেখানে নিজে বসে থেকে মেডিক্যাল বোর্ড করিয়ে তাঁর জরুরি অপারেশন করিয়েছেন।
পুরো অপারেশনের সময় হাসপাতালে বসেছিলেন মন্ত্রী। অপারেশন শেষে তাঁকে কেবিনে ঢুকিয়ে এরপর গেছেন বাসায়। আজ উত্তম কাঁদতে কাঁদতে বললেন এই সময়েও ত্রান দিতে চারবার এলাকায় গেছেন নাসিম ভাই। কারও বাধা শোনেনি।
প্রতি নির্বাচনে তিনি যে সিরাজগঞ্জের একাধিক এলাকায় নির্বাচন করে জিততেন। সেখানে তাঁর জন্যে গ্রামের পর গ্রামের মানুষ কাঁদছেন নির্ঘুম। দূর্গম চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে যার জন্যে জ্বলেছে বিজলি বাতি।
গ্রামের সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। চরের বহু মানুষেরাও পৌঁছে গেছেন বিশ্বের নানা দেশে। সেখান থেকেও তাঁরজন্য কাঁদছেন অনেক মানুষ। এতো মানুষের কান্নাও কী পরোয়া করবেনা ভিলেন করোনা!
এবার এই মহামারী করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতে যেদিন হাসপাতালের কেবিন থেকে তাঁর প্রিয় মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার কথা ছিল, সেদিন সকালেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন ভিলেন স্ট্রোকে।
তাই তাঁর আর প্রিয় অভ্যাস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা আর হয়নি। এবার অসুস্থ হবার আগে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলছিলেন সাংবাদিকদের জন্যে ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করুন।
সাংবাদিকদের ঝুঁকি ভাতার বিষয়টি নিজেই ভাবছেন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। এই করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির ফাইটার ডাক্তার, পুলিশ সহ অন্যদের মতো সাংবাদিকদের ঝুঁকি ভাতা দেবার সময় সাংবাদিক অন্তঃপ্রান মোহাম্মদ নাসিম কী থাকবেন পাশে?
এতোদিন প্রিয়জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক-শিল্পী-সাহিত্যিক সহ যখন যে অসুস্থ শুনেছেন সবার আগে তাকে দেখতে সেখানে সেখানে ছুটে গেছেন প্রিয় নাসিম ভাই। কেউ কোথাও পৌঁছতে পারেনি তাঁর আগে।
আজ স্বাভাবিক সময় হলে মোহাম্মদ নাসিমের খোঁজ নিতে হাসপাতালের চারপাশজুড়ে লেগে থাকতো জনসভার ভিড়। দল আর চৌদ্দ দলের নেতাকর্মীদের ভিড় সামাল দিতে মোতায়েন করা লাগতো বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।
যিনি সাবলীল ব্রিফিং এর জন্যে বিখ্যাত ছিলেন তাঁর জন্যে শনিবার অফিসিয়েল ব্রিফিংটি হয়নি! আওয়ামী লীগের প্রধান সব নেতা, চৌদ্দ দলের সব প্রধান নেতা কেউ তাঁকে দেখতেও যেতে পারছেননা!
শুধু আছেন উদ্বিগ্ন প্রিয়জন-মিডিয়া কর্মীবৃন্দ, তাঁর হাসপাতালের সামনে। ডেটলাইন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল। সেখান থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় তারা জানাচ্ছেন প্রিয় নাসিম ভাইর আপডেট। চোখ খুলুন প্রিয় নাসিম ভাই। প্লিজ।