কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়

এটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ডিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার টাকা করে টাকা নগদ অর্থ দেয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষনা দেন, ‘কেউ যেন বঞ্চিত না হয়’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটা জায়গায় মানুষের কষ্টটা দূর করাটাই লক্ষ্য। সেটাই চাই। এত বেশি মানুষ, হয়তো অনেক বেশি দিতে পারবনা। কিন্তু, কিঞ্চিৎ পরিমান দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়’।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো হৃদয় ছুঁয়েছে। কারন আমি একটি কল্যান রাষ্ট্রে থাকি। এখানে রাষ্ট্র নাগরিকদের নানা সময় নানা কিছু দেয়। এসব পেয়ে পেয়ে এখানে আমরা অভ্যস্ত।

যেমন এখন এই করোনা দূর্যোগে রাষ্ট্র এখানে প্রতিটি তালিকাভূক্ত ভাতার বয়স্ক অথবা অসুস্থ ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্টে সাপ্তাহিক ভাতার বাইরে এক কালীন ৭৫০ ডলার পৌঁছে দিয়েছে।

এখানে বেকারদের আগে সপ্তাহে ২৭৫ ডলার করে জব সিকার ভাতা দেয়া হতো। এই করোনা সময়ে সেটি এখন সপ্তাহে ৫৫০ ডলার করে দেয়া হচ্ছে। জব কিপার নামে নতুন একটি ভাতা দেয়া হচ্ছে সপ্তাহে ৭৫০ ডলার।

কর্মক্ষেত্রের কর্তৃপক্ষ যখন পরিস্থিতির জন্য কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেনা। সেটি এখন দিচ্ছে সরকার। এ দেশের সরকারের এমন সামর্থ্য আছে। দেশটায় মানুষও কম। মাত্র আড়াই কোটি।

বিপুল জনসংখ্যার বাংলাদেশে সে সামর্থ্য রাষ্ট্রের নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই দূর্যোগে তাঁর আরও কিছু উচ্চারন মন ছুঁয়েছে। যেমন মানুষকে তিনি বলছেন, সরকারি ত্রানকে তারা যেন দয়ার সামগ্রী মনে না করেন।

এটি তাদের অধিকার। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে এই দূর্যোগে সীমিত সামর্থ্য সহ সামাল দিচ্ছে সরকার। কথা বলনেওয়ালারা পদে পদে প্রশ্ন তুলছে। যেমন এই পঞ্চাশ লাখ দরিদ্র মানুষের তালিকায় যে কিছু লোভী ভূত ঢুকেছিল সে প্রশ্নও উঠবে।

কিন্তু বাংলাদেশ যে কোটির বেশি ছাত্র বৃত্তির টাকা দেয় তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বিধবা ভাতা-বয়স্ক ভাতার টাকা দেয়, তা নিয়ে প্রায় প্রশ্ন ওঠে। কারন অসাধু পন্থায় স্থানীয় অনেকে সেখানে নিজস্ব পছন্দের নাম তুলে।

ধরা পড়লে সে তালিকা সংশোধিত হয়। এই পঞ্চাশ লাখের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাংলাদেশের এই সরকার তা সংশোধন করতে পারবে, তা আমি বিশ্বাস করি। কারন মানুষকে দেবার সরকারের তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন আছে।

তবে আই চাইবো এই আড়াই লাখ যার একাউন্টেই যাক না কেনো টাকাগুলো যাতে সেখান থেকে এখন কেড়ে আনা না হয়। কারন এখন সবার টাকা দরকার। যে পায়নি তাকে যেন টাকাটা দেবার চেষ্টা করা হয়।

মানুষে হাতে এখন টাকা দরকার। এই মানবিক রাষ্ট্র এখন মানুষকে আহার দিচ্ছে। এই মানবিক পুলিশ-সেনাবাহিনী-আনসার সহ সবাই এখন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।

বিপন্ন কৃষক, যে ফসল বিক্রি করতে পারছেনা, তার কাছ থেকে ফসল কিনে এনে অভাবী মানুষকে এক টাকায় নানাকিছুর বাজার তুলে দিচ্ছে সেনাবাহিনী! এমন মানুষের জন্যে মানুষের এমন সব বিচিত্র প্রকারের ভালোবাসা বাংলাদেশ আগে দেখেনি।

এমন আজ সবাই নেমে পড়ার কারন সবাই দেখছে রাষ্ট্র এখানে আন্তরিক। নির্ঘুম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাক্ষন সবাইকে সাহস যুগিয়ে চলেছেন। মানুষের সাহস এখন বহাল রাখাটা সবার আগে বেশি দরকার।

এখন যে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাংলাদেশে করোনা রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, নেতৃত্বকে সাহস ধরে রেখে এ তুফান পাড়ি দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সবার এখন মন খারাপ।

যখন মানুষের মন খারাপ থাকে তখন সে নানা রকম বেহিসেবি আচরন করে। তখন সে এভাবে পড়ি কি মরি করে বুঝে অথবা না বুঝে মহামারীর হট স্পটের দিকে ছুটে আসে! মরার সময়ে এভাবে ভিড় করে ঈদ শপিং এ যায়!

বাংলাদেশকে এই সময়ে নানাকিছুর সঙ্গে দেশের এসব অদ্ভূত মানসিক বৈকল্যের মানুষজনকেও সামাল দিতে হচ্ছে। এখন যে মহামারীর সময়। সে কারনে জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের মতোকে ব্যক্তিত্বকেও সবাই মিলে শেষ বিদায় জানানো গেলোনা।

দেশের সবচেয়ে সংরক্ষিত একটি হাসপাতালে রেখেও মহামারীর সংক্রমন থেকে তাকে রক্ষা করা যায়নি। এতকাল যিনি অজস্র নাগরিক শোকসভায় সভাপতি্ত্ব করেছেন, এই সময়ে তাঁর জন্যে একটি নাগরিক শোকসভারও আয়োজন করা যাবেনা।

কারন এখন করোনা মহামারীর সময়। এখন দেশের মানুষকে বাঁচানোর সময়। আনিসুজ্জামান স্যার, সাহাদাত হোসেইনের মতো দেশ প্রেমিক ব্যক্তিত্বদের এই দূর্যোগ পাড়ি দেবার পর আমরা সবাই মিলে বসে সম্মান জানাতে পারবো।