চার আব্বুর ছেলেরা হতে চান ঢাকার মেয়র

মেয়র সাঈদ খোকনের কান্না রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আব্বু মেয়র হানিফের হাত ধরে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। আব্বু মারা যাবার পর নেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অভিভাবক। তিনি মেয়র হয়েছেন। তিনি ডেঙ্গু মশার কামড়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন এখন কঠোর পরীক্ষার সম্মুখিন। এখন তিনি মনে করেন অভিভাবক শেখ হাসিনাই এখন তাঁকে ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে আড়াল করে আবার মেয়র প্রার্থী করতে পারেন, ইত্যাদি। আদতে সাঈদ খোকনের চোখের সামনে তাঁর ‘রাজনৈতিক কঠিন সময়ের’ অসুখটির নাম ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপস এমপি! এই প্রার্থীকে চোখের সামনে দেখে তিনি কান্না সামাল দিতে পারেননি। খোকন একটা কথা শুধু বলেননা বা অনেকে ভুলে আছেন যে ১/১১’র লোকজনের সঙ্গে তিনি চলে গিয়েছিলেন। এরপরও শেখ হাসিনা তাঁকে সুযোগ দিয়ে তাঁর আব্বু মেয়র হানিফের প্রতি মহানুভবতা দেখিয়েছেন। আজকালকার আব্বুর ছেলেরা এভাবে সময়মতো আব্বুর রাজনৈতিক দলের কথা ভুলে যেতেও সময় নেননা।

ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপস এমপিও একজন আব্বুর ছেলে। তাঁর আব্বু-আম্মু শেখ ফজলুল হক মনি, আরজু মনি দু’জনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের ভয়াল হত্যাকান্ডে খুন হয়েছেন। এরপর থেকে চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফুফু শেখ হাসিনা তাদের দুই ভাই তাপস-পরশের অভিভাবক। তাপস আগে থেকেই ঢাকার ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকার এমপি। হাইকোর্টের আইনজীবী তাপস এরমাঝে দেশের আলোচিত আইনজীবী। তিনি নানানজনের জামিন করাতে পারেন। সিলেটের রাগিব আলীর আইনজীবীও এই তাপস। সফল আইন ব্যবসা ছেড়ে তিনি এখন মেয়র হতে চাইছেন। তাঁর ভাই পরশকে এবার যুবলীগের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক এবং এতোদিন রাজনীতি বিমুখ পরশ সাদামাটা জীবনের জন্যে আলোচিত ছিলেন।

আরও দুই আব্বুর ছেলে তাবিথ আউয়াল এবং ইশরাক হোসেনকে বিএনপি ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিনের মেয়র প্রার্থী করেছে। তাবিথের আব্বু আব্দুল আউয়াল মিন্টু বিএনপি আমলের সফল ব্যবসায়ী। তাঁরও এক সময় ঢাকার মেয়র হবার সখ ছিল। ছেলেকে দিয়ে এখন সখ পূরন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাবিথ স্মার্ট। বিএনপি যখন বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলে তখন তাবিথকেও সঙ্গে রাখে। মেয়র আনিসুল হকের বিরুদ্ধেও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। বিএনপি সেই দুপুরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় তাঁর আর নির্বাচনে থাকা হয়নি। দুপুরবেলার নির্বাচন বর্জনের একটি সুনাম-দুর্নাম আছে বিএনপির। এবার তাবিথ বলেছেন দুপুরে আর তারা বাসায় চলে যাবেননা।

ক্যান্সারে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর আমেরিকায় মারা গেছেন সাবেক মেয়র ও মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। সরকারি সহায়তায় তাঁর লাশ আনা হয় দেশে। লাশের সঙ্গে দেশে ফিরে ইশরাক একটি তাৎক্ষনিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তখনই মনে হয়েছে আব্বুর উত্তরাধিকারী হতে চান ইশরাক। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দল মনোনয়ন দেয়নি। এবার দিয়েছে। এই চারজন হলেন চার আব্বুর ছেলে। বাংলাদেশে আব্বু-আম্মুর ছেলে-মেয়ে, পরলোকগত স্বামীর স্ত্রীর রাজনৈতিক পদ-নির্বাচনের পদ প্রার্থী হবার বিস্তর নজির আছে। এরজন্যে এলাকায় এলাকায় অনেক যোগ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন হয়না। সহানুভূতির ভোটে এরা পাশও করে।

একটা ঘটনা বলি। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এসেছিলেন বাংলাদেশে। ঢাকা-জয়দেবপুর জুড়ে তখন শুধু সাজ সাজ রব। জয়দেবপুরের বৈরাগীচালা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় রানীকে। বাংলাদেশের গ্রামের মেয়েরা-মায়েরা কিভাবে ঢেকিতে চাল গুড়া করে পিঠা তৈরি করেন, এসব দেখানো হয় রানীকে। বিমান বন্দর স্টেশন থেকে একটি ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হয় সেই গ্রামে। এরজন্য কেনা হয় বিশেষ একটি ট্রেন। আরও মজার একটা ঘটনা হয় ওই সময়ে। বৈরাগিরচালা যাবার পথের দু’পাশে যে সব জায়গায় ট্রেনে বসে রানী গরিবি দেখে ফেলার ঝুঁকি ছিল ওই জায়গাগুলো ডেকোরেটরের পর্দায় ঢেকে দেয়া হয়। রমনা পার্কে রানীকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। রাজকীয় সম্বর্ধনা আদর আপ্যায়নে খুশি রানী সেখানে বলেন রমনা পার্ক লন্ডনের হাইড পার্কের চেয়ে সুন্দর। রিপোর্টার নামের একটি পত্রিকা তখন তাদের শিরোনামে লিখেছিল ‘রানী তাঁর পুরাতন প্রজাদের দেখতে এসেছিলেন।‘

বাংলাদেশ সহ এশিয়ার নানা দেশের ভোটারদের মনের ভিতরের এক প্রকারের প্রজা সুলভ মনোভাবের কারনে আব্বু-আম্মু বা পারিবারিক প্রার্থীরা নির্বাচনে মনোনয়ন পায়-জয়ী হয়। এমন রাজনৈতিক আব্বু-আম্মুর বাইরে আনিসুল হক শেখ হাসিনার পছন্দে ঢাকার মেয়র হয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম সে রকম আরেকজন রাজনৈতিক আব্বু-আম্মু বিহীন মুগ্ধ করার মতো মানুষ মেয়র এবং এবারেও প্রার্থী।

fazlulbari2014@gmail.com