বিএনপি একটি আন্দোলন করতে চায়। দলের বক্তৃতাবাজ বুড়ো নেতাদের মুখ রক্ষার জন্যেও একটি আন্দোলন করা দরকার। কারন দলটির বেশিরভাগ নেতা প্রেসক্লাবের ভিতরে বাইরে কাগুজে বক্তৃতা নির্ভর অথবা দৌড়ে ফার্স্ট। দুর্নীতির মামলায় দন্ড মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে জেলে। হাসপাতালে প্রিয় দাসী-বান্দি ফাতেমা সঙ্গে থাকলেও ফিরোজার স্বাভাবিক জীবন তাঁর নেই। মন ভালো না থাকায় আর্থাইটিজের বিষ-ব্যথা বেড়েছে। মেজাজ খিটখিটে থাকলে খালেদা ডাক্তারদের দেখাও দেননা। এরজন্যে তাঁর আর্থাইটিজ-ডায়াবেটিকের সমস্যা বেড়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন তাকে জামিন দিতে হবে। তিনি চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাবেন। যেন দেশে কোন ডাক্তার নেই-চিকিৎসা নেই। দেশের সব চিকিৎসা কপালপোড়া গরিব লোকজনের জন্যে। খালেদা জিয়া প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তিনি, এ দলের নেতারাতো গরিব না। তাই দেশের চিকিৎসা-ডাক্তার তাদের পছন্দ না। কিন্তু তারা চেয়েছে তাই জামিন দিতেই হবে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে খালেদার জামিনের আবেদনের শুনানি হবার কথা ছিল। এ নিয়ে বিএনপির তরফে এমন একটি ধারনার সৃষ্টি করা হয়, যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়, তাহলে জামিন দিতেই হবে। সেদিন জানা গেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে পারেনি। এরজন্যে তারা আরও সময় চেয়েছে। আপিল বিভাগ তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রিপোর্টের জন্যে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন। সিদ্ধান্ত হয় জামিনের শুনানি হবে ১২ ডিসেম্বর। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের বিষয়টি নিয়ে এমন তাতিয়ে রাখা হয়েছিল যে আপিল বিভাগের এজলাসকক্ষে বিচারপতিদের উপস্থিতিতে কী করা যায় কী করা যায়না তা নিয়েও তারা হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন! বিএনপির সিনিয়র নেতারা তখন আদালত কক্ষে ছিলেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের তারা থামানোর চেষ্টা করেননি। বিব্রত প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করে বলেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা উচিত। ওই পরিস্থিতিতে আপিল বিভাগের বিচারকরা এজলাস ছেড়ে চলে যান। এরপর তারা এজলাসে ফিরলেও অন্য মামলার বিচারকাজ চালাতে পারেননি। এমন নজিরবিহীন ঘটনা বাংলাদেশে আগে কখনো ঘটেনি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও আইনজীবী নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন চিৎকার করে বলছিলেন খালেদা জিয়ার জীবনমরণ সমস্যা। এক সপ্তাহ দেরি করলে তাঁর জীবন বিপন্ন হলে এর দায় কে নেবে। মাহবুব উদ্দিন খোকন এখানেও নিশ্চিত হয়ে বলছেন, এক সপ্তাহ পর খালেদার জামিন হবে! আর্থাইটিজের সমস্যায় একজন রোগী কষ্ট পায়। এতে তার জীবন যায় না। ৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার যারা বলে ফেলেছিলেন আজ জামিন না দিলে খালেদা জিয়া আর বাঁচবেননা তারা চুপ মেরে গেছেন! মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন আদালত কক্ষে তারা হট্টগোল করেননি। চিৎকার করে বলেছেন, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। ন্যায় বিচার চেয়ে আইনজীবীরা এটা কোর্টে সব সময় বলেন। মাহবুব উদ্দিন খোকন শুধু বিএনপির নেতা নন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদেরও নেতা। আপিল বিভাগের আদালতকক্ষের আচরনবিধি নিয়ে তিনি কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? আইনজীবীদের না বলা হয় কোর্টের অফিসার। কোর্টের নিরাপত্তা মর্যাদা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হচ্ছেন একেকজন আইনজীবী। মাহবুব উদ্দিন খোকন কী তাদেরই নেতা?
এসব কারনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের জামিন প্রশ্নে মূল আলোচনার বাইরে দেশজুড়ে এখন আলোচনা-বিতর্ক আপিল বিভাগে বিএনপির কান্ড! খালেদা জিয়ার জামিন দরকার। এরজন্যে দরকার আদালত এবং দেশের মানুষের সহানুভূতি। কিন্তু আপিল বিভাগে বিএনপিকান্ডে খালেদার সৈনিকেরা মানুষের সহানুভূতি হারিয়েছেন। নির্ধারিত দিনে রিপোর্ট না আসায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আবার বলেছেন, ওই ডাক্তারদের ঘাড়ে মাথা কয়টা যে তারা সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দেবেন। এভাবে সকাল থেকে রাতের মধ্যে সব কথা নিজেই বলে দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল। সমস্যায় পড়ছেন রুহুল কবির রিজভি। মহাসচিবের কারনে তিনি তার রুটিন ব্রিফিং করতে পারছেননা। রিজভির ব্রিফিং’এর পাশে যারা বসেন তাদের কেউ কেউ আবার তার খরচাপাতি দেন। বিএনপির মহাসচিবও কিন্তু দেশে কোন চিকিৎসা করাননা। চিকিৎসার দরকার হলে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক যান। দেশের ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা না করান তাদের সমালোচনা করলে কি পরিণতি হয় তাও তিনি জানেননা। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডাক্তারদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্টের নীচে কিছু ডাক্তারের লেখা মন্তব্য পড়ছিলাম। মির্জা ফখরুল এসব পড়েন কিনা জানিনা। পড়লে বুঝতে পারতেন কেনো তাদের আন্দোলন হয়না।
এরমাঝে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন সুপ্রিমকোর্টে বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যবস্থা মানে মামলা। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা উচিত। প্রধান বিচারপতি এবং আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের ফলোআপ কী হয় সেটাই সবার এখন জানার অপেক্ষা। বিএনপি মহাসচিব এরমাঝে বলে দিয়েছেন আপিল বিভাগে তাদের লোকজনের কর্মকান্ডে কোন অন্যায় হয়নি। মির্জা ফখরুল এক সময় শিক্ষকতা করতেন। ছাত্র পড়াতেন। ন্যায়-অন্যায় নিয়ে তিনি ছাত্রদের আসলে কি পড়াতেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু এখন মোটামুটি স্পষ্ট আপিল বিভাগের ঘটনার মামলা সামাল দিতে হবে বিএনপির অনেককে। কারন এখন রাজনীতির বোঝাপড়া হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউ সেবা সংস্থা না। বিএনপির একটা আন্দোলন করা দরকার। কিন্তু খালেদার জামিন ইস্যুতে তারা ভুল করে ভুল জলে পা ভিজিয়েছে। আন্দোলন করতে তাদের আসলে আওয়ামী লীগের কাছে কোচিং করা দরকার। আওয়ামী লীগ যদি তাদের কোচিং করাতে রাজি হয়। নইলে তারা আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ভিডিও ক্লিপ দেখে নিতে পারে।