বৃহস্পতিবার দুনিয়ার বড় অংশে বক্সিং ডে

বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের বড় অংশে বক্সিং ডে। বাংলাদেশ সহ অনেক দেশের লোকজন বক্সিং ডে শুনতে ভাবতে পারেন এদিন শুধু বক্সিং খেলা হয় নাকি! বক্সিং ডে আসলে ক্রিসমাস তথা বড় দিন সংশ্লিষ্ট একটা দিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঈদ তথা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এই ক্রিসমাস তথা বড়দিন। দাসযুগে ক্রিসমাসের পরদিন বাক্সে করে দাসদের ক্রিসমাসের উপহার দেয়া হতো। এরজন্যে দিনটির নাম হয়ে যায় বক্সিং ডে। বাংলাদেশে যেমন ঈদ-পুজা উপলক্ষে দোকানে-শপিং মলে ঈদের-পুজার কেনাকাটার ধুম চলে খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলো সে রকম কেনাকাটার ধুম চলে ক্রিসমাস উপলক্ষে। ক্রিসমাসে অবিক্রিত পণ্য বেচে শেষ করতে বক্সিং ডে উপলক্ষে বিশেষ মূল্যহ্রাস ঘোষনা করা হয়। দাসযুগের মনিবরা মূলত এমন মূল্যহ্রাসের দিন দাসদের ক্রিসমাসের উপহার কমমূল্যে কিনতেন।

 এখন দাসযুগ নেই। কিন্তু বক্সিং ডে টিকে আছে বড়সড় বিজনেস ইভেন্ট হিসাবে। যেমন ফাদার ডে, মাদার ডে, ভ্যালেন্টাইন ডে এসবও একেকটি বড় বড় বিজনেস ইভেন্ট। খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোয় সাধারন ছুটি ছুটি হিসাবে ক্রিসমাসের দিন অফিস আদালতের পাশাপাশি দোকান-মার্কেট-শপিংমল সব বন্ধ থাকলেও বক্সিং ডে উপলক্ষে এসব খোলে আগেভাগে। এরও আগে এসে ক্রেতারা এসব দোকানের সামনে  এসে লম্বা লাইন দেন। দুনিয়ার নামী কোম্পানিগুলো বক্সিং ডে উপলক্ষে মূলত ইলেক্ট্রনিক্স এবং গৃহস্থালী সামগ্রীতেই মূল্যহ্রাস ঘোষনা করে। তরুন ক্রেতাদের আগ্রহী করে বেশি বেচাকেনা করতে চায় ইলেক্ট্রনিক্স হোলসেলাররা। ক্রিসমাস উপলক্ষে  ফ্রিজ-টিভি থেকে শুরু করে অনেকে ঘরের আসবাবপত্রও বদলান। এ উপলক্ষে সবার টার্গেট থাকে কমলাভে বেশি বিক্রি। অনেকে ক্রিসমাস উপলক্ষে পোশাক-জুতো থেকে শুরু করে গৃহস্থালী সামগ্রী নতুন করে কেনার পাশাপাশি পুরনো অনেক কিছু ফেলে দেন রাস্তায়। এরজন্য ক্রিসমাসের আগেপরে উন্নত দেশগুলোর রাস্তার পাশে কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে পুরনো আসবাবপত্র-ইলেক্ট্রনিক্সের স্তুপ সাফ করতে তৎপর হয় সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি। অনেকে সলভেশন আর্মির মতো এনজিওকে এসব সামগ্রী দান করেন। এগুলো তাদের বিক্রয় কেন্দ্রে কমমূল্যে বিক্রয় করা হয়।

ক্রিসমাসের মতো বক্সিং ডে উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি থাকে খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোয়। ক্রিসমাসের দিন মদের দোকান, বার, নাইট ক্লাব বন্ধ থাকলেও এগুলো আবার খুলে যায় বক্সিং ডে’র সকালে। এ উপলক্ষ্যে হোটেল-রেস্তোরা, পর্যটন কেন্দ্রে ভিড়বাট্টার পাশাপাশি খেলার জগতেও থাকে নানা আয়োজন। যেমন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডে থাকে বিশেষ বক্সিং ডে টেস্টের সূচনা দিন। এ বছর বক্সিং ডে টেস্ট উপলক্ষে নিউজিল্যান্ড দল এখন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বক্সিং ডে টেস্ট খেলেছে ক্রাইস্টচার্চে। রাগবি সহ নানান খেলার ইভেন্টও থাকে বক্সিং ডে উপলক্ষে। দাসযুগের দাসদের প্রতি মনিবদের দয়াদানের বক্সিং ডে এখন খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোর বিজনেস সেক্টরের আয় রোজগারের  বড় একটি উপায় হিসাবেই চিহ্নিত। বাংলাদেশের মতো দেশের যারা এসব দেশে জব করেন তাদের প্রায় সবাই বক্সিং ডে’তে কাজ করতে চান। কারন ছুটির দিনের কাজের মজুরি বেশি। বাংলাদেশি ছাত্র নাবিল সিডনির একটি সুপার মার্কেটে কাজ করে। বক্সিং ডে’তে কাজের শিফট পাবার খুশির খবর দিতে গিয়ে বলেন, বারী ভাই আট ঘন্টার শিফট পেয়েছি। প্রতি ঘন্টার জন্যে জন্যে পঞ্চাশ ডলার করে পাবো।

ক্রিসমাস-বক্সিং ডে-ইংরেজি নিউ ইয়ার এসবই উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজনেস ইভেন্ট। বছরের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর থেকে এগুলোর নানা আয়োজন শুরু হয়ে যায়। কাজের বাজারে ওই সময় থেকেই নতুন লোক নিয়োগ-প্রশিক্ষন এসব শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী যারা বিদেশে কাজ করে পড়াশুনা করেন বছরের মূলত এই সময়েই তারা নতুন একটি ভালো কাজ খুঁজে নেন। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে বছরের অক্টোবর মাস থেকে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়। ছাত্রছাত্রীরা এমনিতে এসব দেশে বছরের সাধারন সময়ে সপ্তাহে সর্বোচ্চ কুড়ি ঘন্টা কাজ করতে পারেন। কিন্তু গ্রীষ্মের ছুটির সময় তারা কাজ করতে পারেন  আনলিমিটেড সময়। মূলত ওই সময়ের কাজের আয় দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনেকে টিউশন ফী পরিশোধ করেন। কাজেই ব্যবসায়ী-চাকুরে সবাই অপেক্ষা করেন ক্রিসমাস-বক্সিং ডে-ইংরেজি নিউ ইয়ারের।

বাংলাদেশে রোজা-ঈদ-পুজা উপলক্ষে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। অথচ ক্রিসমাস-বক্সিং ডে-ইংরেজি নিউ ইয়ার উপলক্ষে খ্রিস্টান প্রধান উন্নত বিশ্বে জিনিসপত্রের দাম কমে। প্রতিযোগিতামূল্যের কম লাভে বেশি বিক্রয় হচ্ছে তাদের ব্যবসার নীতি। এসব দেশের ব্যবসা-বানিজ্যের হিসাব-নিকাশ হয়ে যায় অনলাইনে। বিক্রির টাকা নিজের একাউন্টে যাবার আগেই ট্যাক্স কেটে এরপর যায়। এসব দেশে বেশি দাম বা আয় মানে বেশি ট্যাক্স। এরজন্যেও এসব দেশে বেশি মুনাফার ঝোঁক কম। দোকান কর্মচারীরা নিজেদের দোকান মালিক ভাবেননা। ক্রেতা-গ্রাহকদের অধিকার তাদের মনোযোগের সঙ্গে শেখানো হয়। গ্রাহককে সর্বোচ্চ যা সুবিধা-সেবা দেবার চেষ্টা করেন। ক্রেতা বান্ধব স্টাফ-বিজনেস পলিসির কারনেও তাদের বিজনেস সাফল্যের মূলে। ক্রিসমাস-বক্সিং ডে-ইংরেজি নিউ ইয়ার এসব তাই এসব দেশের ব্যবসায়ী-ক্রেতা সবারই অপেক্ষার সময়। বাংলাদেশের ব্যবসা-বানিজ্যের সবকিছুকে ক্রেতা বান্ধব করতে হবে। বেচা-বিক্রির যাবতীয় সবকিছুর হিসাব-নিকাশ অনলাইনে হলে বাংলাদেশেও গ্রাহককে জিম্মি করে অতি মুনাফার ঝোক কমে আসবে। তখনই বলা যাবে দেশ সত্যিকারের ডিজিটাল হয়েছে।

fazlulbari2014@gmail.com