শৈশবে আমার ঈদ আনন্দ

আমার শৈশবে ঈদ ছিলো এক অসাধারণ আনন্দময় ও খুশির ঝংকারের মতো। যে আনন্দ চাইলে ও আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। মূলত ঈদের দিন এ ঈদ ছিলো না আমার জন্য, মোটামুটি ২০ রমজানের পর থেকে ঈদের আনন্দ নিয়ে মেতে থাকতাম, মনের মধ্যে সারাদিন কৌতুহল ছিলো কখন আসবে ঈদ কখন আমার সেই আকর্ষিত পোশাকটি পরিধান করে সবাইকে দেখাবো।

ঈদের কেনাকাটা: ঈদ উপলক্ষে শপিং করা সবার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়,, তেমনিভাবে আমার ও কিন্তু কম নয়, বরাবরের মতো আপুর সাথেই মার্কেটে যেতাম তখন সব আপুর পছন্দ মতোই সব কেনাকাটা করতাম আর কেননা আমার পছন্দ মতো কিনলে বাড়ি এসে আবার এইগুলো ভালো লাগতো না। তারপর বাড়িতে এসে কাউকে দেখাতাম না এমনকি আমার পরিবারের কাউকে ও না, এগুলো নিয়ে সারারাত ঘুমাতাম যাতে কেউ না দেখতে পারে। মনের মধ্যে তখন একটা ধারনা থাকতো কেউ দেখে ফেললে ঈদ চলে যাবে।

ঈদের আগের রাত: ঈদের আগেরদিনের রাতকে সাধারণত চাঁদ রাত বলা হয়। এই দিনটি ছিলো খুবই আনন্দনীয়, কারন বাড়িতে সবাই আসে ঈদ করার জন্য আর কি যে হৈ হুল্লোড় হতো বলে বুঝাতে পারবো না। ঈদের আগে আরেকটি লক্ষনীয় বিষয় ছিলো মেহেদী লাগানো, এই জিনিস টা না লাগালে মনে হতো ঈদ সম্পূর্ন হতো না, তাইতো ঈদের আগেরদিন দুপুরের পর থেকে আপুর কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতাম কখন মেহেদী লাগাবো, আপু যখন মেহেদী লাগিয়ে দিতো তখন আমার লাগানো মনে হয় শেষ হতো না, দুই হাতের উপরে নিচে, দুই পায়ে লাগানো শেষ হলে ও আমার মন খারাপ থাকতো, আমি বলতাম হয় নাই তাই একবার আমার গালে ও লাগিয়ে দিয়েছিলো আর অনেক বকাঝকা করছিলো। যাইহোক মেহেদী লাগানো শেষ এইবার হলো ঈদের চাঁদ দেখা। প্রতিবারই ঈদের চাঁদ দেখতে যেতাম আমার অতি প্রিয় চাচাতো ভাই ইয়াছিন আরাফাত ও খালেক এর সাথে। একবার তো চাঁদ দেখতে গিয়ে আমার পায়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছিলাম, রক্ত ও বের হয়েছিলো তারপর ও চাঁদ দেখা মিস হয়নি। তারপর যখন বাড়িতে ফিরে আসতাম তখন আর ঘুম আসতো না কখন রাত পোহাবে সোই আশায় থাকতাম। ঈদের আগেরদিন রাতে কিছু খাইতাম না মেহেদী উঠানোর ভয়ে তখন আম্মু জোর করে খাইয়ে দিতো। সারারাত সজাগ থাকতাম আর ভাবতাম ঈদের দিন কি কি করবো, আস্তে আস্তে রাতের অন্ধকার শেষ হলো আর আসলো সেই আকাঙ্ক্ষিত ঈদের দিন।

ঈদের দিনঃ সারারাত অপেক্ষা করার পর ঈদের দিন আসলো খুব ভোরে বিছানা থেকে উঠেই প্রথমতো মেহেদী উঠাতাম হাত, পা থেকে, আহা! কি সুন্দর গাড়ো রং হইছে, কি যে খুশি আমি। এরপর আমি, ইয়াসিন,খালেক ও আমার ছোট ভাই সাগরের সাথে ইয়াসিন এর আপুর বাসায় গিয়ে ওনার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসতাম। তারপর আমরা রেডি হতাম ঈদে মানে ঈদগাহে যাওয়ার জন্য। তখন বাবা মা কে সালাম করার পর সালামী দিতো, খুব ভালো লাগতো, আবার বাবাকে অন্যরা সালাম করলে বাবা যে ওদের টাকা দিতো আমার খুব ভালো লাগতো, কিনতু আবার মনে মনে রাগ ও লাগতো ওদের কেনো টাকা দিবে!! মন খারাপ নিমিষেই শেষ করে দিতাম, কেননা ঈদের দিন মন খারাপ করতে নেই। ঠিক তখনি আবার ঈদের জামা নিয়ে মাতামাতি করতাম, আনন্দে ভরে যতো ঈদের জামা পড়েছি, কি সুন্দর লাগছে আমাকে!! আমাকে সুন্দর লাগছে কিনা তা দেখানোর জন্য তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে ইয়াসিন ও খালেককে বলতাম, দেখতো আমাকে কেমন লাগে? ওরা অব্যশ্যই ভালোই বলতো, ভালো না বললে তো জানে তাদের সাথে যাবো না।

যাইহোক এরপর ওদের সাথে ঈদে যাওয়ার পর অনেক কিছু কিনতাম তার মধ্যে বেশিরভাগ ছিলো মাটির তৈরি হাড়িপাতিল,খাওয়ার জিনিস ও কিনতাম, এরপর বাড়িতে চলে আসতাম, আসার পর একটু মিস্টি খেতাম। এরপর আরেকটা জামা গায়ে দিয়ে আবার ও আমার ভাইদের সাথে ঘুরাফেরার জন্য বের হতাম। যখন সন্ধ্যা হতো তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে যতে ঈদ শেষ এটা ভাবতেই খুব খারাপ লাগতো। ঈদ তো শেষ হবেই একে তো আর ধরে রাখা যাবে না আবার সামনের বছর ঈদ আসবে এই বলে মনকে সান্ত্বনা দিতাম।

প্রকৃতির নিয়ম বড়ই অদ্ভুত, কালক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সেই শৈশব তার সাথে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের সাথে জড়িত সকল আনন্দ ভেদনা। যা আর ফিরে পাওয়া কখনো সম্ভব নয় হাজার চেষ্টা করলে ও না। তেমনিভাবে আমি ও আমার শৈশবকে অনেক মিস করি, মিস করি সেই দিনগুলো যেই দিনগুলোতো আজ অনেকেই আমার পাশে নেই, আর শৈশবের ঈদের কথা মনে পড়লেই দুচোখে অজড়ে পানি চলে আসে খুব ইচ্ছে হয় সেই শৈশব সেই ঈদকে ফিরে পাওয়া যাতে আবার ও আগের মতো আনন্দ করতে পারি, কিন্তু কিছুই করার নাই চাইলে ও আর আসবে না সোনালী দিনগুলো, থাক ওইগুলো স্মৃতি হয়ে।
সবাইকে ঈদুল ফিতরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, ঈদ মোবারক❤