আমাদের কোয়ারেন্টাইন – ডে – ১৩

বিদায় বেলার সুর ….
কাজী নজরুল ইসলামের বিদায় বেলার গান

“তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না,
জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না।
ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না,
শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।।”

গান গাইতে গাইতে মন আদ্র ।

সময় তোমার স্পর্শের সুখে দু:খে কোয়ারেন্টাইনে কত কত বন্ধু পরিজনের  মায়া বিহীন কাটিয়েছি ; হোটেলের দু কামড়ার দুটো ঘরকে  বিদায় বেলার এই মহেন্দ্র ক্ষণে দেবার  মতো দু’ফোঁটা অশ্রু ছাড়া কিছু নেই আমার। … তবু বিদায়ের ক্ষণ বড় বেদনাময় । মায়া হয়ে যায় , দরজায় ,জানালায় । কত স্পর্শ রেখে গেলাম । কত অভিমান , কান্না আনন্দের ক্ষণের স্মৃতি রেখে গেলাম দেয়ালের গায়ে । ছোট্ট পরিদুটোর দৌড় – ঝাপ , কান্না , চিৎকার এঁকে দিয়ে দিলাম  জানালার কাঁচে ।

আমার বড় মেয়ে আজ দুপুরে বল্লো মা আমি ফটোসেশন করি মা? কারন এখানে তো আর কোনদিন আসা হবে না , কিন্তু আমি এই জানালাটাকে খুব মিস করবো মা ।

কাল যাবো , কিন্তু এখন থেকেই রুমটাকে খুব মিস করছি মা ! শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে ! দুইদিনের মেয়ের মুখে মিস করবো শব্দটা কেমন যেন ঘটাং করে বেজে উঠলো । পরক্ষনেই ভাবলাম বাহ ! ওর ভেতরের অনুভূতিগুলো ওর মতো করে বড় হচ্ছে । আবেগ অনুরাগের ভাষা বুঝতে শিখছে ও ।

বল্লাম চলো ছবি তুলে দেই … বলতেই সেই দৌড় অন্য রুমে । গিয়েই বল্লো এ মা ! মা তুমি তো লাগেজ প্যাক করে ফেলছো, আমার ড্রেস নাই তো । বল্লাম দেখো একটা ব্যাগে  লক করা হয়নি , জানি না ওখানে আছে কিনা । একটু পর দেখলাম সে  ক্লান্ত আর রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে একটা স্কার্ট হাতে এই রুমে এলো । মা ! এই ড্রেসটা কষ্ট করে বের করলাম ! কিন্তু এটা কি করে পরবো ? কিসের সাথে । আমি আর কোন উত্তর দিলাম না , বল্লাম  তুমি ম্যানেজ করো আমি একটু কথা বলে নেই ফোনে । কথা বলতে বলতেই সে নিজের ড্রেস অন করে চলে এলো … গলায় আমার চকার পরে হাজির  । হাসবো না কাঁদবো কি বলি আর !

বল্লাম মা রায়া তুমি তো পুরাই ফ্যাশনিষ্টা ! তার হাসি দেখে কে ! পটাপট কতক ছবি তুলে রাখলাম । রুহা সারাদিন ওর কাজে ব্যস্ত । আমি গোছানোর এক ফাঁকে লিখতে বসলাম । আজ জলদি ঘুমের দেশে যেতে হবে , কাল সকালে বের হতে হবে । হোটেল রুম গোছানো দেখে গাড়িয়াল ভাই বল্লো … আরে রাখো ! হোটেল রুম এমনি করে কেউ পরিস্কার করে রেখে যায় না ।

আসল কথা হলো ১৪টা দিনের মায়া , তারপর আমাদের নিজেদের টয়লেট থেকে বাথরুম ডাস্টিং সবই তো নিজেদেরকেই করতে হয়েছে ।

গুছিয়ে রেখে গেলে মনের মধ্যে একটা আনন্দ পেলাম মনে মনে । আমরা যাবার পর যখন সার্ভিসম্যান ঘরে ঢুকে ম্যাসি দেখে যেন না বলতে পারে ,শালা বাংলাদেশী কাঁহিকা, নতুবা ব্লাডি বাংলাদেশী ..  শিট,! এমন কথা গুলো পিঠ পিছে কেউ যেন না বলে তাই বেশ গুছিয়ে রেখে গেলাম ।

যদি ভালোভাবে পৌঁছে যাই তবে আবার লিখবো বাসা থেকে … দোয়া করবেন আমাদের জন্য

সেই ফেব্রুয়ারীর২০ তারিখ বের হয়েছি ২৩ মে বাসায় যাবো … ১৪ দিন পর বাইরের খোলা আকাশ আর নির্মল বাতাসে গা ভিজিয়ে ফিরবো যদি সুস্থ থাকি । করোনার জন্য এতো হয়রানি করতে হলো , আমার অর্ধেক জীবন নাই হয়ে গেছে ।

আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীর রোদ সারিয়ে দাও … আমিন ।