খালেদা যখন বঙ্গভবনের পথে আর লুৎফা কিশোরগঞ্জের ট্রেনে

সতের নভেম্বর ১৯৭৫। ঢাকার একটি অজ্ঞাত বাসস্থানে ক্র্যাচের কর্নেল স্বামী তাহেরের সঙ্গে অনেকক্ষন আলাপ শেষে লুৎফা নারায়নগঞ্জে ফিরে আসেন। ৭ নভেম্বরের পর থেকে নারায়নগঞ্জ থানার পুলিশ তাঁর বাসার আশেপাশে নিরাপত্তা প্রহরা বসিয়েছিল।

মাঝেমধ্যে রাতের বেলাও আসতো টহল পুলিশের জীপ। কিন্তু লুৎফা টের পান ক্রমশ এই নিরাপত্তা দেখভালের বিষয়টি শিথিল হয়ে আসে। উল্টো কেউ তার বাসার দিকে যেতে চাইলে তাকে পথ আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।

নভেম্বরের ২০-২১ তারিখের দিকে লুৎফা শুনতে থাকেন জাসদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। ভাবলেন এই দলটির নেতাকর্মীদের জীবনে বুঝি দূর্ভোগের শেষ নেই। এর আগের সময়েও তারা সবাই সারাক্ষন দৌড়ের ওপর ছিল।

এখন সেই সময় শেষেও তারা দৌড়ের ওপরই আছে। অথচ স্বাধীনতার পর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে এরা যদি আলাদা দল না করে আওয়ামী লীগে থাকতেন তাহলে এসবের কিছুই ঘটতো কী!

উল্টো এরা আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতার চাইতে রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে তারা থাকতেন বেশি প্রভাবশালী। কিন্তু এরাতো ধন-দৌলতের আশায় সেদিন সেই দলগঠন করেননি। তারাই এখন আবার জিয়ার টার্গেট।

সাত নভেম্বরের উদ্যোক্তাদের দাবড়ে বেড়িয়ে জিয়ার কর্তৃ্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আবার একটি অনিশ্চিত ভূতুড়ে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় দেশে। ওই অবস্থায় ছোট তিন বাচ্চা নিয়ে নারায়নঞ্জের বাসায় একাকি দিন পার করছিলেন লুৎফা।

২২ নভেম্বর তাহেরের বড় ভাই আবু ইউসুফ ও তাঁর স্ত্রী নারায়নগঞ্জ এসে তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে যান। ঢাকায় ফিরে আবু ইউসুফ জানালেন তাঁর বাসার চারপাশ ঘিরে ফেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে।

এ খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন লুৎফা। তাহের লুৎফাকে ফোনে বলেন, ইউসুফ ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তিনি জিয়াকে ফোনে পাচ্ছেন না। তখন লুৎফাও নানা দিকে ফোন করতে থাকলে এক পর্যায়ে ফোনে এরশাদকে পেয়ে যান।

এরশাদ তাকে বলেন তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেননা। জেনে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু এরশাদের কন্ঠস্বরে লুৎফার সন্দেহ হয়। কিছু যেন লুকোচ্ছেন এরশাদ। জিয়ার তখন হরিহর আত্মা এরশাদ। জিয়া তাকে নির্ভরও করতেন।

তখনকার ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছিল দ্রুত। ২৪ নভে্ম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল গেট থেকে লুৎফাকে তাহের ফোন করে বলেন তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। এসবই তখন ছিল জিয়ার ‘স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন আইনের শাসন’!

কোন একজনকে গ্রেফতার করলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে নেবার কথা। কিন্তু জিয়া এসবের কোন কিছুরই ধার ধারেননা! লুৎফা তখন জাসদের অন্য নেতাদের অবস্থান জানার জন্যে চারদিকে ফোন করতে থাকেন।

শাহজাহান সিরাজের বাসায় ফোন করলে তাঁর স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ বলেন তাদের বাসা ঘেরাও করে কিছুক্ষন আগে রব, জলিল, শাহজাহান সিরাজ, মোহাম্মদ শাহজাহান সহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এরমানে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জরুরি করনীয় ঠিক করতে এরা সেখানে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু চতুর জিয়া অতিদ্রুত তার জীবন রক্ষাকারীদের গারদে পোরার নীতি নিয়েছে। কোথাও কাউকে আটক করতে এক মুহুর্ত দেরি করা হচ্ছিলোনা।

এ লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করার সময় ‘অনেক সরল সরল ছোটদের ইতিহাসবিদ’ অনেক সরল মন্তব্য করছিলেন। এরমাঝে কমন একটি মন্তব্য হচ্ছে ‘সেদিন তাহের জিয়ার জীবন রক্ষা করায় দেশ হাজার বছর পিছিয়ে গেছে!’

এরমানে জিয়াকে সেদিন যদি মেরে ফেলা হতো পরবর্তীতে বিএনপিরও সৃষ্টি হতোনা, এত দূর্গতিও হতোনা! কিন্তু এই ‘ছোটদের ইতিহাসবিদরা’ যেটি ভাবেননা তাহলো সেদিনের সবকিছুর মূলে কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড।

আর জাতির পিতাকে হত্যার জন্যে এরা খন্দকার মোশতাকদের চেয়ে দোষ দেয় বেশি জাসদের অল্পবয়সী বিপ্লবীদের! শুধু সবাই আপনার সবকিছুতে হ্যাঁ বলতে হবে। তখন সিপিবি হ্যাঁ বলাতে তারা ভালো ছিল। এখন না’ বলাতে তারা পচা।

বঙ্গবন্ধুও তখন সবাইকে নিয়ে চলতে জানতেন। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা আর এক সেক্টর কমান্ডার আরেক সেক্টর কমান্ডারকে হত্যার জন্যে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। এক হত্যাকান্ড আরেক হত্যাকান্ডের পটভূমি সৃষ্টি করে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের নেতা তাজউদ্দিনদের ক্ষমতাহীন করে খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাশালী করা হয়। এরজন্যেও কী তাহের আর জাসদ নেতারা দায়ী? তাজউদ্দিনদের সরিয়ে খন্দকার মোশতাকের খুনের হাত শক্তিশালী করা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন যথাযথ আত্মসমালোচনা নেই।

কেনো সেদিন মাওলানা ভাসানী, জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী খুনিদের সমর্থন ঘোষনা করেছিলেন! সেই জেনারেল ওসমানীকে কেনো আবার জিয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের গণঐক্যজোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হয়েছিল?

আরেক বক্তব্য তখন স্বাধীন দেশে সমাজতন্ত্র চাওয়াটাই ছিল অপরাধের। জাসদের সমাজতন্ত্র চাওয়াটা দোষের ছিল। আপনাদেরটা বুঝি ছিল গুণের? জাতীয় চারনীতিতে সমাজতন্ত্র তখন যে মন থেকে চাওয়া হয়নি, এটিতো আজকের সত্য বাস্তব।

সেদিন সমাজতন্ত্র সোভিয়েত রাশিয়ার সমর্থনের আশায় চাওয়া হয়েছিল। যেমন ভারতের সমর্থনের স্বার্থে সেদিন ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা হয়। এখনও বাংলাদেশের কাগজে কলমে বাংলাদেশের চার মূলনীতিতে ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র লেখা আছে!

কিন্তু মননে বাস্তবতায় বাংলাদেশ এসবের ধারেকাছেও নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, দেশ স্বাধীন হবার পর চূড়ান্ত করা জাতীয় চার নীতি তথা মুজিববাদের অন্যতম চাওয়া ছিল সমাজতন্ত্র। ওটা কী কাগজে লিখে লুকিয়ে রাখার জন্যে?

তেমন জিয়া-এরশাদের সংবিধান বহাল রেখে ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান হয়না। বঙ্গবন্ধু বলতেন বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত। আমি শোষিতের পক্ষে। বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর এসব বক্তব্যের আশেপাশেও নেই।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বে দেয়া জনগনের ভালোবাসার দলটির কারও কারও কাছে জয়নাল হাজারীর মতো নেতারাও অবাক জনপ্রিয়! এ দলের অনেকে বলেন জয়নাল হাজারীরা না থাকলে তাদের এলাকায় নাকি আওয়ামী লীগ থাকতোনা!

আওয়ামী লীগ কী সে এলাকাগুলোতে এখন নেই! এদের কে বোঝাবে এ দলে লোকজন এখনও বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনাকে দেখে আসেন। অন্য কাউকে দেখে আসেননা। এ দলে এখন যার যা খুশি বা সুবিধামতো ইতিহাসবিদ!

আবার ৭ নভেম্বরের সেই সময়ের প্রসঙ্গে আসি। তখন তাহেরের সঙ্গে তাঁর গাড়ি চালক আলাউদ্দিনকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহেরের খোঁজে লুৎফা জিয়াকে ফোন করলে ফোন ধরে কর্নেল অলি বলেন, ‘ভাবী, জিয়া এখন ব্যস্ত আছেন। আপনি যে ফোন করেছিলেন, এটা তাকে বলবো’।

এভাবে তাহেরের সহযোগী তথা ৭ নভেম্বরের বিপ্লব এবং জিয়াকে মুক্ত করার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করেন জিয়া। শুধু তাই নয়, তার নিষ্ঠুর ভূমিকা পারিবারিক পর্যায়েও নামিয়ে নিয়ে যান। লুৎফাকে নারায়নগঞ্জের বাসা ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়।

জাসদের কোন নেতাকর্মী কেউ তখন লুৎফার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেননা। যারাই তাঁর বাসায় যাবার চেষ্টা করছিলেন তারাই হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। গ্রেফতার এড়াতে জাসদের অনেক নেতা-কর্মীও চলে যান আত্মগোপনে।

২৭ নভেম্বরে বেশ রাতে সৈনিক সংস্থার নায়েক সিদ্দিক লুৎফার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সিদ্দিক তাঁকে বলেন এই মূহুর্তে নেতাকর্মীদের সবাই জেলে অথবা আত্মগোপনে। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা।

কিন্তু নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে অন্তত একটা লিফলেট ছেপে বিলি করা দরকার। লুৎফা বুঝতে পারেন লিফলেট ছাপার খরচ তাকে দেয়া দরকার। মাসের তখন শেষ। লুৎফার হাতের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।

হাতে ছিল তাঁর মাত্র পাঁচশ টাকা। সেখান থেকে একশ টাকা বাচ্চার দুধের জন্যে রেখে বাকি চারশো টাকা আর নিজের দুই কানের দুল খুলে সিদ্দিককে দিয়ে লুৎফা বলেন, দেখেন এসব দিয়ে কিছু করা যায় কিনা।

পরের দিন সুবেদার মেজর মাহবুব লুৎফার সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি তাঁকে বলেন আমাকে বাসা ছাড়তে হবে। আপনি পার্টির কাজে ব্যবহার করা কাগজপত্র এবং সব সরঞ্জামাদি সরিয়ে নিয়ে যান।

বাসার পাশেই শীতলক্ষা নদী। সেখানে গিয়ে একটা নৌকা ঠিক করে জিনিসপত্র চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে গেলেন সুবেদার মেজর মাহবুব। সাত নভেম্বরের বিপ্লবের দলিলদস্তাবেজের নানাকিছু এভাবে সৈনিক সংস্থার একজন মাহবুবের মাধ্যমে নারায়নগঞ্জ ত্যাগ করে।

আর সরকারি কর্তৃপক্ষকে বাসা বুঝিয়ে দিয়ে মিতু, যীশু, মিশু তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩০ নভেম্বর অনিশ্চিত জীবনের পথে নামলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও ইতিহাসের ক্র্যাচের কর্নেলের স্ত্রী।

ঢাকায় গিয়ে তারা উঠলেন তাহেরের বড় ভাই আরিফুর রহমানের বাসায়। সেখানে দু’দিন থেকে ট্রেনে রওয়ানা হলেন কিশোরগঞ্জ। অবসর গ্রহনের পর লুৎফার চিকিৎসক বাবা কিশোরগঞ্জে থাকতেন।

বাংলার নারী বিপদে দিনে প্রথম আশ্রয় ভাবে তার পিত্রালয়। বাপের বাড়ি। তখন ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যেতে সারাদিন লেগে যেতো। সকালে রওয়ানা হলে পৌঁছতে পৌঁছতে দিন গড়িয়ে বিকেল চলে আসতো।

ভিড়ের সেই ট্রেন যাত্রাতেও তখন কী একবারও খালেদা জিয়ার কথা মনে পড়েছে লুৎফার? কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ঢাকা রওয়ানার আগে যে খালেদা জিয়া তাঁর কাছে এসেছিলেন। ঢাকা তখন খালেদা জিয়ার কাছে অচেনা এক শহর।

লুৎফাকে পেয়ে খালেদা জিয়া জানতে চেয়েছিলেন ঢাকার কোন মার্কেটে গিয়ে বাজার করলে সস্তায় মাসের বাজার করা যাবে। সোয়ারীঘাটে গিয়ে মাছ কিনলে সস্তা পড়বে কিনা। বাচ্চাদের দুধ কোন মার্কেটে গিয়ে কিনলে সস্তা হবে।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের শাড়ির দোকান পাবনা স্টোরে বড়বোন চকলেট আপাকে নিয়ে শাড়ি কিনতে যাবার পর কী ঘটেছিল তা কী মনে পড়ে খালেদা জিয়ার? শাড়ির এ পর্বটি অবশ্য লুৎফা জানেননা।

স্বামীর যুদ্ধ সময়ের বন্ধু জিয়ার কথা কী তখন মনে পড়েছে লুৎফার? একদিন তাঁর নারায়নগঞ্জের বাসার নাম্বারে শেষ রাতের দিকে জিয়ার ফোন এসেছিল। ঘুমভাঙ্গা চোখে রিসিভার তুলে লুৎফা সেটি তাহেরের হাতে তুলে দেন।

জিয়া সেদিন তার জীবন রক্ষার জন্যে তাহেরের সহায়তা চেয়েছিলেন। সেই প্রান ভিক্ষার প্রতিদান দিতে জিয়া এখন তাহেরকে গ্রেফতার করেছেন! তিন শিশু সন্তান সহ বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন তার লুৎফা ভাবীকে!

সেদিন লুৎফা যদি জিয়ার ফোনের রিসিভারটি তাহেরকে না দিতেন তাহের কী এ ঘটনায় এভাবে জড়াতেন? জিয়ার জীবন রক্ষা করার প্রতিদান হিসাবে লুৎফার শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী আজ জেলখানায়।

অতঃপর সেই ক্র্যাচের কর্নেলের সংসারকে বাড়িছাড়া করে তাদের তুলে দেয়া হয়েছে কিশোরগঞ্জের ট্রেনে। আর একজন বিশ্বাসঘাতকের স্ত্রীর মর্যাদায় বঙ্গভবনের পথে খালেদা জিয়া! লুৎফার ভাবনায় তখন সবকিছুই অস্পষ্ট। স্পষ্ট শুধু ট্রেনের শব্দ।

এভাবে কিশোরগঞ্জের বাবার বাড়িতে দিন কাটছিল লুৎফার। মাস কয়েক পর তার ভাই সাব্বির ঢাকা থেকে একটা চিঠি লিখেন। জেলখানার ভিতর কোর্ট বসিয়ে কর্নেল তাহের সহ জাসদ নেতাদের বিচারের আয়োজন করছেন জিয়া।

এ খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন লুৎফা চলে আসেন ঢাকায়। আরিফুর রহমান ছাড়া তাহেরের আর সব ভাই তখন গ্রেফতার হয়ে জেলখানায়। লুৎফা তাই ঢাকায় এসে আরিফুর রহমানের বাসাতে ওঠেন।

জাসদ নেতাদের অনেকেই তখন জেলে। আত্মগোপনে থাকা কিছু নেতার সঙ্গে গোপনে লুৎফার দেখা হয়। ক্র্যাচের কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন এরজন্যে একটি ট্রায়ালের আয়োজন শুধু দেখানো দরকার ছিল।

কারন এক ‘পত্রিকা প্রকাশনীর ইতিহাসবিদ’ লিখেছেন সেনাবাহিনীর অমুক অমুক অফিসার নাকি জিয়ার কাছে গিয়ে বলেছেন তাহেরের ফাঁসি না হলে তারা সেনাবাহিনীতে থাকবেননা!

আর জিয়া শুধু ভাবছিলেন তাহেরকে কিভাবে মাফ করে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়! অতএব কথিত ‘তাদের’ তথা সেই সেনা অফিসারদের সেনাবাহিনীতে রাখতে তাহেরকে হত্যা করতে হবে! তিনি জিয়াকে ‘মহামানব’ করার চেষ্টায় ‘নিখুঁত’।

তখন সেই প্রহসনের বিচারের ক্যামেরা ট্রায়াল উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক নেতাদের এ উপলক্ষে ঢাকা আনা হয়। লুৎফা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেননা। মাঝে মাঝে জেলখানা থেকে টুকরো টুকরো চিঠি আসতো।

সেগুলো জোড়া লাগিয়ে চেষ্টা করা হতো দুরুহ পাঠোদ্ধারের। ছাব্বিশ বছর মাত্র বয়স তাঁর তখন। অথৈ সাগরে ভাসছেন তিনি। কে তখন একটু আসল তথ্য তাঁকে দিতে পারবে! সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছিলেন তিনটি শিশু সন্তানের এক মা।

১৯৭৬ সালের ১৭ জুন আদালত বসে রায় ঘোষনা করে। প্রহসনের বিচারের সবকিছু যেহেতু আগে থেকে ঠিক করা তাই বিচারেও বেশি সময় নেয়া হয়না। ক্র্যাচের কর্নেলের ফাঁসির রায়। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড। (ক্রমশঃ)