যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্ঘুম রাত কাটে

একটি অনলাইনে লেখা হয়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের চলতি পরিস্থিতিতে নানান কাজের ব্যস্ততায় এখন প্রায় নির্ঘুম রাত কাটান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে যারা চেনেন জানেন তারা এর সত্য জানেন।

প্রধানমন্ত্রীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এর প্রমান আছে। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলনগুলো আমি দেখি। এরপরও এতোকিছুতেও তিনি ক্লান্তিহীন! কিন্তু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের আরও সতর্ক হতে হবে। কারন প্রধানমন্ত্রীর বয়সও হয়েছে। 

এখন এই দূর্যোগে বাংলাদেশের বড় আরেকটি বিপদ হলো প্রধানমন্ত্রীর গতিতে চলার মতো সর্বক্ষনিক নিবেদিতপ্রান দ্বিতীয় চরিত্র এখন তাঁর আশেপাশে নেই। তাজউদ্দিনের পাশেও তখন সৈয়দ নজরুলরা ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ। নতুবা তিনি অনেক সার্ভিস দিতে পারতেন।

অথচ এদলের বেশ কিছু নেতা, গত দশ-বারো বছরে তারা এত কামিয়েছেন যে একেকজন এখন একেক জেলার মানুষকে খাওয়াতে পারতেন। দেশে ভোট এলে এরা সব বস্তির পথও মুখস্ত চেনেন। মানুষের ঘরে শুধু খাবার পৌঁছে দিলে তারা অন্তত এত তাড়াতাড়ি এভাবে বেরিয়ে চলে আসতোনা।

কিন্তু চরম দূর্যোগের এই সময়ে তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। শেখ হাসিনা ডেকে দাওয়াত করে তাদের মাঠে নামাবেন কেনো? প্রধানমন্ত্রীকে দেখেশুনে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।

ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা গোলাম রাব্বানী, যার বিরুদ্ধে আমিও অনেক লিখেছি বলে অনুতপ্ত। এই রাব্বানী এখন প্রতি রাতে ঢাকার রাস্তার যত মানুষকে খাওয়ায়, এমন দশটা রাব্বানী প্রতিটি শহরে থাকলে দেশের অন্য চেহারা হয়ে যেতো।

চট্টগ্রামের নুরুল আজিম রনি, বরিশালের তিলোত্তমা শিকদারের মতো অনেক অনেক চরিত্র সারাদেশে এখন খুব বেশি প্রয়োজন। রনির এখন কোন সাংগঠনিক পদ নেই। কিন্তু সবাইকে সে দেখিয়ে যাচ্ছে মানুষের জন্যে কাজ করতে পদ লাগেনা।

ছাত্রলীগ নেত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য তিলোত্তমা এখন ছুটির কারনে বাড়িতে থেকে খাবার রান্না করছে আর বরিশাল শহর ঘুরে ঘুরে খাবার তুলে দিচ্ছে রোজাদার মানুষের মুখে। তাঁর দৃষ্টান্ত নিয়ে আলাদা রিপোর্ট করেছে জনকন্ঠ। অনেক বড়হও কীর্তনখোলার তীরের মেয়ে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর এলাকার মানুষজনকে ত্রানের সঙ্গেও ডিমও দিচ্ছেন। এই চিন্তাটি খুব পছন্দ হয়েছে। এলাকায় এলাকায় এমন ডিম-দুধ ত্রানের সঙ্গে দিলে আমাদের বিপন্ন কৃষকদের খুব উপকার হবে।

এমনসব উদ্বাবনীর চিন্তার মানুষের সমাবেশে, এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের বড় যুদ্ধাস্ত্রের নাম শেখ হাসিনা। সদাজাগ্রত, সক্রিয় বঙ্গবন্ধু কন্যা। এখানেই বিপদ তার বিরোধীদের। কারন তারাও জানে শেখ হাসিনার এই সদাজাগ্রত সক্রিয় ভূমিকার কারনেই তাদের প্রার্থনার লাখ লাখ মৃত্যুর স্বপ্ন পূর্ন হবেনা।

কত খারাপ লোকজনও বাংলাদেশে থাকে ভাবতে পারেন? শুধু শেখ হাসিনা বিপদে পড়বেন এই আশায় তারা দেশের মানুষজনের মৃত্যু কামনা করেন! এরা হারবে।

কয়েকদিন পরপর একজনের তার ছবি সহ একটা লেখা লিখে হতাশা ছড়ানোর ব্যর্থ অপচেষ্টা দেখে হাসি। সেই চুয়াত্তর থেকে তিনি এই কাজটিই করে আসছেন। লাভ হবেনা। এসব দুই নাম্বারি বাদ দিয়ে নিজের সহকর্মীদের মজুরি বাড়ানোয় মন দিন। তাদের মনের দোয়া পাবেন। এখনতো সারাক্ষন বদদোয়া পান।

করোনা মহামারীকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে পরাশক্তি সমূহের জেরবার অবস্থায় সীমিত সামর্থ্যের বাংলাদেশের সংগ্রামটা যে দুরুহ সেটাতো সত্য। কারন আমেরিকা-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া এমনকি ভারতীয় সামর্থ্য আর বাংলাদেশের সামর্থ্য এক নয়।

আমি অস্ট্রেলিয়ায় থেকে এদেশের সংগ্রামটা জানি। নানাকিছু বন্ধ থাকায় প্রতি সপ্তাহে এ দেশটার ক্ষতি হচ্ছে চার বিলিয়ন ডলার! দশ লাখের বেশি মানুষ এরমাঝে চাকরি হারিয়েছেন। এরজন্যে আগামী শুক্রবারের পর থেকে এখানকার নানাকিছু খুলে দেয়া হচ্ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রান-তাসমান ট্রাভেল প্ল্যান নামের একটি প্রস্তাব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসে যোগ দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিকা আরডেন।

পৃথিবীর এক দেশের সরকার প্রধান আরেক দেশের সংসদে গিয়ে সৌজন্য বক্তৃতা দেন। কিন্তু আরেক দেশের মন্ত্রিসভার বৈঠকে গিয়ে যোগ দেবার কথা কী কেউ শুনেছে? বাংলাদেশেতো রীতিমতো দেশ বিক্রির অভিযোগ চলে আসতো! করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পৃথিবীর নানা ধারনা এমন বদলে দিয়েছে।

বাংলাদেশকেও যুদ্ধটা করতে হচ্ছে নিজস্ব সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে। নিজস্ব স্টাইলে।  অস্ট্রেলিয়া এই দূর্যোগে বেকার তথা জব সিকারদের সপ্তাহে সাড়ে পাঁচশ ডলার, জব কিপারদের সপ্তাহে সাড়ে সাতশ ডলার করে ভাতা দিচ্ছে।

বাংলাদেশের কী সে সামর্থ্য আছে? অস্ট্রেলিয়ায় একজন জুনিয়র রিপোর্টারকে সপ্তাহে সাড়ে সাতশ ডলারের নীচে বেতন দেয়া যায়না। বাংলাদেশের মালিকরা রিপোর্টারদের মাসে কত বেতন দেন?

শুরুতে বাংলাদেশের একদল চিল্লাচ্ছিলেন লকডাউন লকডাউন করেনা কেনো! তারা তাদের দেশের মানুষকে চেনেননা জানেননা? বাংলাদেশের এসব সিংহভাগ অজুহাত মাষ্টার  মানুষজনকে লকডাউন-কার্ফু না, দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েও নিয়ন্ত্রন সম্ভব ছিলোনা।

 যে নির্দেশ ফিলিপাইনে দেয়া হয়েছিল।  বাংলাদেশে তেমন একজনকে গুলি করে মারতে গেলে এদের একেকজন কী প্রতিক্রিয়া দেখাতেন?

বিদেশি বাজার হারানোর ভয় থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দিতে হয়েছে। এতে করোনার সংক্রমন বেড়েছে এলাকায় এলাকায়। গার্মেন্টস শ্রমিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের আইসোলেশন-চিকিৎসা চলছে।

এক্ষেত্রে ইতিবাচক হচ্ছে কোথাও কাজ থেমে নেই। করোনা সংক্রমন স্বত্ত্বেও গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও কোথাও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে কাজ করা হচ্ছে কোথাও এমন কোন অভিযোগ নেই। এই ফাইটিং এটিচিউটটাই এখন দরকার। গার্মেন্টস কারখানাগুলো যখন খোলা হয়ে গেছে সেগুলো বন্ধ করা যাবেনা।

 এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেলে এখন যারা হেই হেই করছেন তারাই তখন বলবেন বাংলাদেশ দারুন ফাইট দিয়েছে। জগতের সকল সাফল্যের প্রশংসা হয়। যে যেখানে ব্যর্থ হয়, তার নিন্দার শেষ নেই।

অনেকে বলছেন বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতি সামাল দেবার পর নানাকিছু খুলে দিচ্ছে। আর বাংলাদেশ দিচ্ছে আগে। এই কৌশলটাও ঠিক করে দিচ্ছে অর্থনীতি। তারা পরিস্থিতি সামাল দেবার পর তাদের গার্মেন্টস পণ্য দরকার হচ্ছে।

কয়েকদিন পর চিংড়ি সহ আরও নানাকিছুর দরকার হবে। আমরা চাহিবা মাত্র গ্রাহককে দিতে না পারলে তারা আরেক জায়গা থেকে তা নেবে। আর একবার আরেক জায়গা থেকে নেয়া শিখে গেলে আমাদের এসব ইন্ডাস্ট্রি লাটে উঠবে।

বাংলাদেশের এখন দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। যে সব দেশ একবার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে তারা নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কারন এই রোগের কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।

ব্র্যাকের সহায়তায় বুথ বাড়িয়ে টেস্ট বাড়ানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সবাই যার যার প্রয়োজনে সাবধান থাকুন যাতে আক্রান্ত না হন। আপনি সাবধান থাকলে সরকার বা কেউ বাড়ি গিয়ে আপনাকে আক্রান্ত করে দিয়ে আসতে পারবেনা।

নিকটজন কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সাহস দিন। প্রপার কাউন্সিলিং করুন। সব ফ্লু কিন্তু ছোঁয়াচে। ঋতু বদলেরও সময় আমাদের অনেকেরই ফ্লু হয়। ওই সময়ে আমরা যেভাবে সাবধানতা অবলম্বন করি, প্যারাসিটামল খাই, চা-গরম পানি, বেশি বেশি স্বাস্থ্যকর তরল খাই,

ফ্লুর মতো এই রোগটিকেও আমরা এসব খাবারের সঙ্গে শুধু সবার থেকে আলাদা থেকে সামাল দিতে পারি। খামোখা লোকজন শুধু ভয় পেয়ে ক্যাজুয়ালিটি বাড়ায়। মুনতাসীর মামুন স্যার তাঁর মায়ের করোনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

অতঃপর তাঁর যখন সংক্রমন হলো শুধু সেই অভিজ্ঞতায় সাহস রেখে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ফেলেছেন। কাজেই আপনিও পারবেন। এখন মার্কেট-শপিংমল খোলা, মসজিদ খোলা এসব নিয়ে হৈহৈ উদ্বেগ ছাড়িয়ে লাভ নেই।

বুদ্ধ পূর্নিমা উপলক্ষে দেয়া বানীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৌতম বুদ্ধের আদর্শে শান্তিপূর্ন  দেশ গড়ে তুলতে আহবান জানিয়েছেন। এসব দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বানীর ভাষাগুলো প্রায় একই রকম লিখিত থাকে। গতবছর বা আগের বছরের বুদ্ধ পূর্নিমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বানী খুঁজে পড়লে একই লেখা পাবেন।

বুদ্ধ পূর্নিমার বানীতে প্রধানমন্ত্রী হযরত মোহাম্মদের (দঃ) জীবন আদর্শ অনুসরনের কথা বলতে পারেননা। কিন্তু একদল শয়তান লোক এখন প্রধানমন্ত্রীর এই বুদ্ধ পূর্নিমার বানী নিয়েও ট্রল করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়!

এমন দেশে সরকারকে মসজিদ খুলে দেবার সিদ্ধান্তটি এখন নিতেই হয়েছে। আপনি এখন শপিংমল-মসজিদে যাবেন কিনা, গেলে কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন, সে সিদ্ধান্ত-কৌশল আপনার।

কারন চোখ খুললেইতো দেখতে পাচ্ছেন, বেশিরভাগ লোকজন কেমন বেপোয়া! সামাজিক দূরত্ব মানছেনা। অথচ সামাজিক দূরত্ব না মানলে এই মহামারীর সংক্রমন এড়ানোর কোন সুযোগই নেই।

ভালো থাকুক বাংলাদেশ, আমাদের জন্মভূমি। এই মহামারী মোকাবেলায় সবার সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের বুবু, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর মর্যাদা রক্ষায় কভিড নাইন্টিন যোদ্ধা ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এবার অতুলনীয়-অবিশ্বাস্য ভূমিকা নিয়েছে।

 বাংলাদেশের প্রশাসনের সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসাররা-সৈনিকেরা এবার যে অনন্য ভূমিকা নিয়েছেন, কোন মহামারী এই বাংলাদেশকে হারাতে পারবেনা। আর কোন দেশে কোথায় এমন আরেকটি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন আছে?

আমাদের রনি, রাব্বানী, ছোট চাঁদপুর-পত্মীতলার শুভ, তিলোত্তমা শিকদারের মতো সৃষ্টি সুখের উল্লাসী উদ্বাবনী তারুণ্য, আমার করোনা জয়ী বন্ধু শওকত হোসেন মাসুম যে দেশের আছে সে দেশকে হারায় কার সাধ্য? লাগবা বাজি? জয় বাংলা।