করোনার সময় ভুলভাবে কোন খবর ছড়াবেননা প্লিজ

পেরুতে আটকাপড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের আনতে বিশেষ একটি বিমান গেছে। রবিবার সকালে বিমানটির সিডনি এসে পৌঁছবার কথা। সেই বিমানটি পৌঁছবার পর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের আলাদা গন্তব্য হবে। অস্ট্রেলিয়ানদের বিমান বন্দর থেকে নিয়ে যাওয়া হবে সিডনির একটি হোটেলে। সেখানে নির্ধারিত কোয়ারিন্টান সময় শেষে তারা যার যার বাড়ি যাবেন। নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের সিডনি থেকেই পৃথক বিমানে নিয়ে যাওয়া হবে সে দেশে। কভিড নাইন্টিনের সংক্রমন শুরুর পর থেকে দেশে দেশে এটি এখন একটি বিশেষ রুটিন কার্যক্রম। বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের যার যার দেশে নিয়ে গেছে। বা এখনও নিচ্ছে।

এদের বেশিরভাগ জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। এখন ডুয়েল সিটিজেনশীপে সে সব দেশের নাগরিকও। ওইসব দেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা আছেন। সেখানে তাদের ডাক্তারদের সঙ্গেও পূর্ব নির্ধারিত এপোয়েন্টমেন্ট আছে। অনেকে ওই সব দেশের সামাজিক নিরাপত্তার নানা ভাতাও পান। সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছবার পর করোনার কারনে দেয়া বিশেষ ভাতাও পাবেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমন আতঙ্কের কারনে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে দেশে দেশে এমন নানা লোকজন আটকা পড়েন।

কিন্তু বাংলাদেশের কিছু পত্রিকায় তাদের নিয়ে রিপোর্টটি এমনভাবে করা হয়েছে বা হচ্ছে যেন তা পড়তে গেলেই ভয় ছড়াবে! যেন বাংলাদেশে রোগটি মহামারী আকারে ছড়াবার আগেই ওই সব দেশ তাদেরকে দ্রুত জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নিচ্ছে! কে কি যন্ত্রনায় ভোগেন কে কোন উদ্দেশে কোন রিপোর্ট করেন বা করান তা বোঝার ক্ষমতা পাঠকদের আছে। প্লিজ জাতীয় দুর্যোগের সময় এসব শঠতা বাদ দিন। আজকের এই দুর্যোগ বিশ্বব্যাপী। কভিড নাইন্টিনে যে আপনি আক্রান্ত হবেননা সে গ্যারান্টি নেই। এই রোগ কিন্তু বয়স্ক-মাঝারি-অল্পবয়স্ক সবার হচ্ছে।

 এ যাত্রায় বেঁচে গেলে আপনাদের অস্তিমজ্জার এমন শয়তানি অনেক করতে পারবেন। আপাতত ক্ষান্ত দেন প্লিজ। বাংলাদেশে কে কারা এসব বিশেষ লোক তা তারা এ লেখা পড়ে সহজে নিজেকে শনাক্ত করতে পারছেন। চীন থেকে উৎপত্তি নেয়া রোগটি বাংলাদেশে মেগা প্রকল্পগুলোয় কাজ করা কোন চীনা নাগরিকের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেনি। তেমন কিছু ঘটলে কিন্তু এই নিউজ মেকাররা এতোক্ষনে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি  করে ফেলতো। যেমন করেছিল পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়! অনেক নিরীহ মানুষের তাতে প্রান গেছে।

চীনা বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় নাগরিকদের মাধ্যমে রোগটি ইউরোপে যায়। চীনের সমাজতন্ত্র ধংসের আশায় ইউরোপ যাদের একদিন তাদের বা তাদের পূর্বপুরুষদের অনেককে আশ্রয় দিয়েছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে রোগটি ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ নিজের সামর্থ্য অনুসারে যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে তা খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক। সব দুর্যোগের মতো বাংলাদেশের অনেক মহামানব তরুন-যুবক সহ সব বয়সী মানুষ এই দুর্যোগ সামাল দিতেও এগিয়ে এসেছেন। সবাইকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

সারা দুনিয়ার মতো অপ্রস্তুত অবস্থায় বাংলাদেশেও শুরুতে চিকিংসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট ছিল এর অনেকটাই এরমধ্যে সুরাহা হয়েছে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোর মনোভাব বদলাতে কাজে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া ভূমিকা। বাংলাদেশের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার মতো একজন সর্বক্ষনিক প্রধানমন্ত্রী আছেন বলে বাংলাদেশ ভালোভাবেই সামাল দেবে এ পরিস্থিতি। এই বিশ্বাস আপনিও রাখতে পারেন। রবিবার খুলনা, বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর আরেকটি ভিডিও কনফারেন্সে আসার কথা। এ নিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যদের মতো সেনাপ্রিয়দের কটাক্ষ যারা ছাপছেন তারা ভালো করছেননা।

এবারের এই করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের যে ভূমিকা তা সারাদেশ জুড়ে অনেক বেশি আন্তরিক ও মানবিক। শুধু মানুষকে ঘরে রাখা নয়, মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে পুলিশ বাহিনী। সিভিল প্রশাসনের মানবিক কর্মকর্তারা, জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনেকে দেশের অনেক এলাকায় দেবদূতের ভূমিকা নিয়েছেন।

বাংলাদেশের সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর সদস্যরা, কোষ্ট গার্ডের সদস্যরা কোন এলাকায় মানুষের জন্যে কী করছেন, তা এলাকার লোকজন জানেন। এসব খবর কিন্তু খুব কম মিডিয়ায় আসছে। যত বেশি আসছে চাউল চোরদের খবর! নরকের কীট এসব চাউল চোরগুলো কার ভাই-ভাগ্নে-বাপ বা ভাইপো এসব উল্লেখ না করে উদ্দেশ্যমূলক বেশি বেশি প্রচার করা হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়! আওয়ামী লীগ এত বছর ধরে ক্ষমতায়, এদলে সাধুর পাশাপাশি এসব মতলবী মিডিয়ায় মতো শয়তানও আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ভূমিকার কারনে দেশের এদের কোথাও কিন্তু এদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হচ্ছেনা। এদের ক্রসফায়ারে দেবার জনমতও আছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজনের ত্রান সহায়তার রিপোর্ট এড়িয়ে শুধু চাউল চোরদের রিপোর্টে যাদের বেশি আগ্রহ তাদের কিন্তু অতীত ইতিহাস ভালো নয়।

একটা তথ্য দেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগেও কিন্তু আওয়ামী লীগকে এমন চিত্রিত করার খেলা শুরু হয়েছিল। ছাত্রলীগের তৎকালীন এক নেতা শফিউল আলম প্রধান আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিন গেটে একটি সমাবেশ ডাকেন। সেই সমাবেশের ঘোষনাপত্র যিনি পড়েছিলেন তিনি কিন্তু এখনও একই সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত। পৃথিবীর কোথায় বাংলাদেশ নিয়ে ভালো কি লেখা হয়েছে এমন কিছু তিনি ভালোবাসেননা। খারাপ কিছু লেখা পেলেই সেটি ছাপতে ঝাঁপিয়ে পড়েন! এমন সাংবাদিকতা পৃথিবীর আর কোন দেশে পাবেননা। তার যন্ত্রনার কারন ওয়াকিফহালরা জানেন। ১/১১’র ভূমিকাও লোকজন ভুলে যায়নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই শফিউল আলম প্রধানের ভূমিকাও সবাই জানেন। এসব সাংবাদিকতা দিয়ে কিন্তু দেশে আবার সামরিক শাসন আনা যাবেনা। তারা ভুলপথে হাঁটছেন। ভুল পথে হারিয়ে যাবেন।

ব্র্যাকের একটি জরিপে দেখানো হয়েছে এখনও দেশের ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে এখনও খাবার পৌঁছানো যায়নি। এ রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে আসুন আমরা যার যার সামর্থ্যকে কাজে লাগাই। আমার এলাকায় কুলাউড়ায় জাতীয় তরুন সংঘ মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে কাজ করছে। এমন স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে যার যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন। আজ বাড়িতে ফোন করে বলেছি প্রতিবেশী যারা অভাবের কথা প্রকাশ করতে পারেনা হাত পাততে পারেনা তারা যাতে ক্ষুধায় কষ্ট না পায়। করোনার বিরুদ্ধের যুদ্ধের মূল অস্ত্র মানুষকে ঘরে রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে হলে তাদের সবার ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। সবাই এ চেষ্টা করছেন। আপনিও সহায়তা বাড়ান। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমন জাতীয় সুযোগ জীবনে খুব বেশি আসেনা। আমার মন বলছে বাংলাদেশ এই সংকট খুব ভালোভাবে সামাল দেবে। আমাদের উর্বর জমি-পরিশ্রমী কৃষক আছে। এই পরিস্থিতি সামলে আমরা সবাই কৃষকদের পাশে দাঁড়াবো। এই পরিস্থিতিতে আপনার আশেপাশের কোন কৃষক-কৃষি শ্রমিক যেন অভুক্ত না থাকেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা সেখানেও নিয়ে যান প্লিজ। মোনাজাতউদ্দিন এখন বেঁচে থাকলে তাই করতেন।